ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই উপকূল অতিক্রম

বড় ধরনের কোন ক্ষয়-ক্ষতি ছাড়াই উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় “মিধিলি”। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার সময় উপকূল অতিক্রম করে ঝড়টি। তবে ঘূর্ণিঝড় মিথিলির প্রভাবে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ‘এমভি প্রিন্স অব ঘষিয়াখালী-১’ নামে একটি লাইটার জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে পশুর নদীর কানাইনগর সংলগ্ন এলাকায় ডুবচরে আটকা পরে তলা ফেটে লাইটার জাহাজটি ডুবে যায়। এসময় লাইটারে থাকা ১২ জন নাবিক তাৎক্ষণিকভাবে সাঁতরে নদীর তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা লাইটার জাহাজটি মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া এলাকায় অবস্থানরত একটি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে কয়লা বোঝাই করে যশোরের নওয়াপাড়া উদ্দেশে যাচ্ছিল। লাইটার জাহাজটি ডুবে গেলেও মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে নিরাপদ রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ লাইটার শ্রমিক এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মাইনুল হোসেন মিন্টু জানান, ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা বোঝাই ‘এমভি প্রিন্স অব ঘষিয়াখালী-১’ নামে একটি লাইটার জাহাজটি যশোরের নোয়াপাড়া যাবার পথে ঘূর্ণিঝড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে পশুর চ্যানেলে কানাইনগর এলাকায় চরে ধাক্কা লেগে তলা ফেটে ডুবে যায়। তবে লাইটারে থাকা ১২ জন নাবিক তাৎক্ষণিকভাবে সাঁতরে নদীর তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মালিক পক্ষ লাইটারটিকে উদ্ধার করবে বলে জানান এই শ্রমিক নেতা।

এর আগে, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ ধেয়ে আসার খবরে মোংলা বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর বন্দরে অবস্থানরত ১৪টি বিদেশী জাহাজে পন্য ওঠানামার কাজ সম্পূর্ন বন্ধ করে দেয়া হয়। জারি করা হয় বন্দরে নিজস্ব সতর্ক সংকেত ‘এলার্ট থ্রি’। লাইটার জাহাজগুলো সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়। এছাড়া বন্দর জেটি ও পশুর চ্যানেলসহ বহিনোঙ্গরে অবস্থানরত সব বনিজ্যিক জাহাজকে পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার নির্দেশ দেয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বাগেরহাট জেলায় ৩৫৯টি ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে করা হয় মাইকিং।

লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে রেড ক্রিসেন্টের সিপিবি সদস্যসহ প্রায় তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবি কাজ করেছে। সুন্দরবন থেকে দেশী বিদেশী সব পর্যটককে সকালের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে লোকালয়েন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল উত্তাল থাকায় কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনসগ উপকূলের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে। দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারনে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুঁটকি পল্লীর জেলে-মহাজনদের প্রায় দুই কোটির আধা শুকনো ও কাচা মাছ নষ্ট হয়ে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে দাবী করেছে জেলেরা। এছাড়া বাগেরহাট জেলা জুড়ে ভারিবৃষ্টির কারনে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. হারুন অর রশিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ধেয়ে আসায় মোংলা বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছিলো। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলি অতিক্রম করার পর এখনও নি¤œচাপ রয়েছে। যার প্রভাবে বাগেরহাট জেলা জুড়ে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে যাবে। এছাড়া আগামীকাল পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলীপ মজুমদার জানান, সুন্দরবন থেকে দেশী বিদেশী সব পর্যটককে সকালের মধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ে লোকালয়েন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বঙ্গোপসাগর উত্তাল উত্তাল থাকায় কয়েক হাজার ফিশিং ট্রলার সুন্দরবনসহ উপকূলের বিভিন্ন মৎস্য বন্দরে আশ্রয় নিয়েছে। দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টির কারনে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুঁটকি পল্লীর জেলে-মহাজনদের প্রায় দুই কোটির আধা শুকনো ও কাচা মাছ নষ্ট হয়ে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলি ধেয়ে আশায় ৩৫৯টি ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়ছে। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে রেড ক্রিসেন্টের ১ হাজার ৯২০ জন সিপিবি সদস্যসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংগঠনের সদস্যরা কাজ করেছে। নগদ ৯ লাখ টাকা, ৬৫০ মেট্রিক টন চাল পর্যাপ্ত মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন