টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে বিয়ের চার দিনের মাথায় এক ভুমিহীনকে বাথরুমের ভিতর আটকিয়ে রেখে তার নববধুর অশ্লীল ছবি ও নগ্ন ভিডিও ধারণসহ শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করেছে এলাকার প্রভাবশালী ৪ যুবক।
ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) আনুমানিক রাত ৩টার দিকে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের বাঁশবাড়িয়া চৌরঙ্গী মোড় আশ্রয়ন প্রকল্পে।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ওই নববধূ বাদী হয়ে ৪ যুবকের নাম উল্লেখ করে টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
টুঙ্গিপাড়া থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান আজ রোববার বেলা আড়াইটার দিকে জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার আল-বেলী আফিফা রোববার দুপুরের দিকে ঘটনাস্থল আশ্রয়ন প্রকল্প পরিদশন করেছেন। আমরা ওই নববধু, তার স্বামী এবং তার শশুর শাশুড়ীকে থানা হেফাজতে এনেছি। এ ঘটনায় একটি মামলা রুজু করা হবে। এরপর ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
গত ২৯শে অক্টোবর আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা মোঃ আকব্বর মোল্লার ছেলে মোঃ মঈন মোল্লার সাথে ওই নববধুর বিয়ে হয়। বিয়ের চার দিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে তার স্বামী জানান।
জানা গেছে বৃহস্পতিবার রাতে ঘরে ঢুকে বাথরুমে আটকানো হয়েছে স্বামী কে। জোরপূর্বক খুলা হয়েছে পরনের কাপড় , এরপর নগ্ন করে তোলা হয়েছে অশ্লীল ছবি । দেওয়া হয়েছে হত্যার হুমকি, করা হয় অমানবিক নির্যাতন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই নববধু বলেন, বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) (আনুমানিক রাত ৩ টায়) আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজন ঘরে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে ৪ যুবক পানি খাওয়ার কথা বলে জোর পূর্বক আমাদের ঘরের ভিতর প্রবেশ করে। এরপর তারা আমার স্বামী মঈন মোল্লাকে ধরে নিয়ে বাথরুমের ভিতরে আটকে রাখে। আমার শোর চিৎকার শুনে অপর ঘরে থাকা আমার শশুর শাশুড়ি ছুটে আসলে ওই চার যুবক তাদেরকে মারধর করে বেধে রাখে। বলা হয় কোন টু শব্দ করলে তোদের সকলকে মেরে ফেলা হবে। এরপর তারা আমার পরনের কাপড় জোর করে খুলে ফেলে আমাকে নির্যাতনের চেষ্টা চালায়। সুধু তাই নয়. জোর করে তারা তাদের মোবাইল ফোন দিয়ে আমার বিবস্ত্র নগ্ন ছবি তুলে এবং ভিটিও চিত্র ধারন করে। এ সময় তারা আমাকে হত্যার হুমকি এবং আমার এই নগ্ন ছবি/ভিডিও ফুটেজ ফেসবুকে ছড়িয়ে ভাইরাল করে দেওয়া হুমকি দেয়।
অভিযোগ করে নববধুর স্বামী মোঃ মঈন মোল্লা (২২) বলেন, গত বৃহস্পতিবার মধ্যে রাতে টুঙ্গিপাড়ার বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের প্রভাবশালী ওমর তালুকদারের ছেলে নাইম তালুকদার (২১) ও একই গ্রামের ঠান্ডা তালুকদারের ছেলে মিজু তালুকদার (২২) ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা জোর পূর্বক আমার ঘরের ভিতর প্রবেশ করে। এরপর তারা আমাকে বাথরুমের ভিতর আটকে রেখে আমার নববধূকে শ্লীলতাহানি চেষ্টা করে এবং মোবাইল ফোনে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। পরে আমার বাবা মা আমাদের চিৎকার শুনে আসলে তাদেরকে মারধর করে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ সাখাওয়াত হোসেন এর স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বলেন (৩৬) এই এলাকায় একদল নেশাগ্রস্ত বখাটে লোক নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে প্রায়ই এমন অপকর্ম করে থাকে।
স্বামীকে আটকে রাখে এবং অপর দুই জন নববধূকে শ্লীলতাহানি চেষ্টা করে। এ সময় আমরা চিৎকার শুনে এগিয়ে আসলে বখাটেরা পালিয়ে যায়।
আশ্রয়ন প্রকল্পের একাধিক অসহায়-দরিদ্র-ভুমিহীন মানুষজন বলেন, আমরা অসহায়-দরিদ্র ও ভুমিহিন মানুষ বলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বসবাসের জন্য গর দিয়েছেন। আমরা যারা আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকি সবাই অন্য জায়গার থেকে আসছি। আমাদের আপনজন বলতে কেউ নেই। আশ্রয়ন প্রকল্পের কোন মানুষই তাদের ভয়ে টু-শব্দ করতে পারে না। আমার ঘরেও দুইটা মেয়ে আছে। এখন এখানকার অবস্থা নিয়ে আমরা শঙ্কিত আছি। এরআগে আমরা রাস্তার পাশে সরকারী জায়গায় ছিলাম এবং খুব ভালো ছিলাম। সরকার আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু এখানে বিন্দুমাত্র দেননি। আশ্রয়ন প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘরে যারা আক্রমন চালাতে পারে তারা সব পারে। তাই এখান থেকে চলে যাবো ভাবছি। প্রয়োজনে আবারো রাস্তার পাশে গিয়ে থাকবো, তাতে আমাদের ইজ্জত নষ্ট হবেনা বরং ইজ্জতের সাথে মরতে পারবো।