ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়ান্ন বছরেও কেউ কথা রাখেনি

চুয়ান্ন বছরেও কেউ কথা রাখেনি

চুয়ান্ন বছরেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি কোন জনপ্রতিনিধি। ফলে লক্ষাধীক মানুষের জন্য তৈরী হয়নি অতি জরুরী একটি সেতু।তাই নিজেদের টাকায় তৈরী করা নৌকা দিয়ে এপার ওপার রশি টেনে পারাপার করতে হয় কয়েক ইউনিয়নের মানুষকে।

গাইবান্ধার গোাবিন্দগঞ্জ উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের মথুরাপুরে করতোয়া নদী।দুই পারে বাস করেন কয়েকটি ইউনিয়নের লক্ষাধীক মানুষ। গোবিন্দগঞ্জ অথবা গাইবান্ধায় যেতেও দুই পারের মানুষকে করতোয়া নদী পার হতে হয়। কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই এই নদীর উপর দেয়া হয়নি কোন সেতু। করতোয়া নদীর এই সেতু এই এলাকার মানুষের দু:খ।

মথুরাপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধ ওমির উদ্দিন জানান,আমারা যৌবন কাল থেকে মথুরাপুরে ছয়ঘরিয়া ঘাটের উপর একটি সেতুর দাবী জানিয়ে আসছি।কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই।বাধ্য হয়ে করতোয়া নদীর দুই পারের মানুষ ও পথচারীদের কাছে সহযোগিতা নিয়ে আমরা চলাচলের জন্য নিজেরাই একটা নৌকা বানিয়েছি।কিন্তু তাতে নেই মাঝিমাল্লা।ফলে নদীর এপার থেকে ওপার পর্যন্ত রশি টেনে দিয়েছি। নৌকায় উঠে নিজ হাতে রশি বা দড়ি টেনে পারাপার করতে হয়। এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে অন্তত ৫০ বছর আগে। দাড়ি টেনে নৌকা টানতে গিয়ে অনেকেই ভরা নদীতে পড়ে আহত হয়েছেন। অনেকের মটর সাইকেল ,সাইকেল সহ মুল্যবাদ জিনিস হারাতে হয়েছে নদীতে।তিনি বলেন যুবক থেকে বৃদ্ধ হলাম কিন্তু সেতু আর দেখতে পেলাম না। যারা আসেন ভোট নিতে তারা মাথায় হাত দিয়ে প্রতিশ্রুতি দেন –এবার আমি বিজয়ী হলে আপনাদের সেতুর আশা পুরন করবো। কিন্তু বাস্তব চিত্র আলাদা। নেতা বদল হয়েছে ,অনেক সরকার বদল হয়েছে কিন্তু এই সড়কে পথচারীদের ও আমাদের ভাগ্য বদল হলো না।

আলা উদ্দিন মিয়া বলেন, ভোট নিয়ে জিতে গিয়ে আর এলাকায় আসেন না। আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে শুধু শুনে আসছি ব্রীজ হবে। আমাদের জীবনে আমরা বোধ হয় আর সেতু দেখতে পাবো না। নেতারা আশ্বাস দিয়ে ভোট নিয়ে চম্পট।আর আসে না।

মথুরাপুর ছয়ঘরিয়া ঘাট এলাকার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম জানান,ভরা নদীতে দড়ি টেনে নদী পার হয়ে ওপারে গিয়েছিলাম জমিতে কাজ করতে। নৌকা ছিলো ওপারে। শেষে কয়েকজন লোক নৌকা নিয়ে এসে আমাকে পার করে নিয়ে যায়। এখানে একটি সেতু হোক তা আমরা চাই। আমরা রিলিফ চাই না। আমাদের এই ব্রীজটা করে দেন।

এই এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, সেতু না থাকায় আমরাদের মেয়েদের বিয়ে দিতে কষ্ট হয়। ছেলে মেয়েরা স্কুল কলেজে যেতে ঠিক সময়ে পৌছিতে পারে না। চাকুরীবিবী,অসুস্থ রোগী,শিক্ষার্থীরা যদি ঠিক সময়ে আসেন করতোয়া নদীর পাড়ে। কিন্তু নৌকা থাকে ওপারে। ওপারে লোক না হলে দড়ি টেনে নৌকা এপারে নিয়ে আসার মানুষ থাকেনা। ফরে ঘন্টারপর ঘন্টা বসে থাকতে হয় নদীর পারে। ততক্ষনে স্কুল কলেজ ও অফিসের সময় পার হয়ে যায়। আর অসুস্থ্য রোগীকে পাশের অন্য বাড়িতে নিয়ে রাখতে হয়। গাইবান্ধা থেকে নাকাইহাট মথুরাপুর হয়ে গোবিন্দগঞ্জ যেতে সময় কম লাগে।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই , তালুককানুপুর ইউনিয়ন সহ পার সুন্দইল, কমল,নারায়নপুর, বড় নারায়নপুর, পগইল, ধর্মপুর,জামালপুর, নোদাপুর, বৃষ্টিপুর, মালাধর, কৃষনোপুর, নয়াপাড়া, রামনাথপুর সহ শতাধিক গ্রামের মানুষ এই পথেই চলাচল করে। করতোয়া নদীর এই নৌকা দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার মানুষ পারাপার করেন। তাছাড়াও ব্রীজ না থাকায় ২ লক্ষাধীক মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে জীবন যাপন করছেন। তাদের অনেকেই যান কর্মস্থলে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। দড়ি টেনে নৌকায় নদী পার হতে পারেনা অনেক শিশু শিক্ষার্থী। ফলে অনেক শিক্ষার্থী তাদের স্কুল পাল্টিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে। মুমুর্ষ রোগীকে নিয়ে দড়ি টেনে নৌকা থেকে পানি পড়ে গিয়ে ৪ জন নদীতে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। পরে আশে পাশের লোকজন সাঁতার দিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেছে এমন ঘটনাও কম নয়। পথেই জীবন দিতে হয়েছে অনেক । তারপরও হয়নি নদীর উপর একটি সেতু। শুধু ভোটের প্রতিশ্রুতি নিয়েই চরম দুর্ভোগে আছেন।

ইউপি মেম্বর খয়বর আলী জানান,ভাই আমাদের দৌড় অতো দুর নয়। সেতুর কাজ করবেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও এমপি সাহেব রা। কিন্তু তারা তো ভোটের আগে এসে মিনতি করেন। প্রতিশ্রুতি দেন আপনারা আমাকে ভোট দেন।তিনি নির্বাচিত হলে আপনাদের দুই পারের মানুষের দু:খ থাকবে না। তার পর নির্বাচিত হলে আর কেউ আসেন না এই গ্রামে।

সংবাদটি শেয়ার করুন