গাইবান্ধায় পাটের ভালো ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পেয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পাট চাষিদের। উৎপাদন খরচ না উঠায় হতাশ হয়ে পড়েছে কৃষকগণ। অনেকেই আগামীতে পাট চাষ না করার কথাও ভাবছে।
তবে পাট থেকে আসা পাটখড়িতে আশার আলো দেখছে তারা। পাটখড়ি দিয়ে তৈরি হচ্ছে চারকোল। যা রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন কো¤পানি সরাসরি কৃষকদের কাছে থেকে চারকোল তৈরির কাঁচামাল হিসেবে পাটখড়ি সংগ্রহ করছে।
গাইবান্ধা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে পাট চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৮২ হেক্টর কম। বিঘাপ্রতি জমিতে ৮ হাজার ৭৭৩ টাকা উৎপাদন ব্যয় ধরা হয়েছে। ফলন এসেছে ৪২ হাজার ৫১০ টন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী, দারিয়াপুর এবং ফুলছড়ি ও পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাটচাষিরা বলেন, গত বছরের চেয়ে এবার পাটের ফলন ভালো। তবে বাজার মন্দা। পাইকার নেই। চাহিদা না থাকায় কম দামে পাট বিক্রয় করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচও উঠছে না। কৃষক সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, এ অঞ্চলে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পাট কেনা হচ্ছে না। ফলে লাভবান হচ্ছে ফড়িয়া-পাইকাররা। হাটে-বাজারে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট কেনার দাবি করেন তারা।
ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া এলাকায় পাটচাষি রাহাত মিয়া বলেন, তিন বিঘা জমি থেকে পাটের ফলন পেয়েছে ২২ মণ। তার উৎপাদন খরচ পড়েছে ৪৫ হাজার টাকা। প্রতি মণ পাট ২ হাজার টাকা দরে বিক্রয় করে পেয়েছেন ৪৪ হাজার টাকা। তার লোকসান হয়েছে ১ হাজার টাকা। কামারজানী বাজারের পাট ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ বলেন, বড় পাইকাররা হাটে আসছেন না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাট ক্রয় করে গুদামজাত করে রাখছেন। পাটখড়িতে লাভ গুনছেন চাষিরা।
পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা এলাকার কৃষক হাই মিয়া বলেন, দুই বিঘা জমিতে পাটখড়ি হয় দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার আটি। একশ আটি পাটখড়ির বর্তমান বাজারদর ১৩০-১৫০ টাকা। সবগুলো পাটখড়ি বিক্রয় হলে পাওয়া যাবে ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা। পাট চাষে এখন পাটখড়িতেই লাভ বেশি।
গাইবান্ধা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলতি বছর কৃষক পাটের ভালো ফলন পেলেও বাজারদর নিয়ে হতাশায় রয়েছে। উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলে অনেক কৃষক পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। ফলে পাটচাষ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে একযোগে কাজ করতে হবে।