ঢাকা | রবিবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্য সচেতনতায় ক্ষুদে ডাক্তাররা

স্বাস্থ্য সচেতনতায় ক্ষুদে ডাক্তাররা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বুধবার প্রবেশ করলেই দেখা যায় কোমলমতী শিক্ষার্থীরা ভীষণ ব্যস্ত। তাদের মধ্যে কেউ ‘রোগী’দের নাম তালিকাভুক্ত করছে, কেউ ওজন মাপছে, আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করছে। কোনো রোগীর শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সারাদেশের ন্যায় এ উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক দল ক্ষুদে ডাক্তার শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। মূলত কোমলমতী শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হিসাবে গড়ে তুলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে চালু করা হয় ‘ক্ষুদে ডাক্তার’ কার্যক্রম। তারা প্রতিনিয়ত সহপাঠীসহ শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিচ্ছেন । এতে করে কোমলমতী শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতন আরও একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে। ‘ক্ষুদে ডাক্তার’ কার্যক্রম খুবই ফলপ্রসু বলে মনে করছেন সচেতন মহলরা।

সরেজমিনে পৌর শহরের দেবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ক্ষুদে ডাক্তাররা কেউ নাম তালিকাভুক্ত করছে, কেউ ওজন মাপছে, আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করছে। সবাই যেন ব্যস্ত সময় পারকছেন বিদ্যালয়ে। স্ব স্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওইসব কাজে সার্বিক ভাবে শিক্ষার্থীদেরকে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতর ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার একটি অংশ হচ্ছে ফাইলেরিয়াসিস নির্মূল ও কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম কর্মসূচি শুরু হয়। এরমধ্যে ওজন, উচ্চতা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করা হয়।

এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো: সেকের মিয়া বলেন, এই বিদ্যালয়ে মোট ৩৩৭ শিক্ষার্থীর সংখা রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি শ্রেণির ৫ জন করে মোট ১৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্ষুদে ডাক্তারের দল গঠন করা হয়েছে।

তুলনামূলকভাবে যারা বড়, চটপটে শিক্ষার্থী তাদের ক্ষুদে ডাক্তার বানাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। অ্যাপ্রোন, ওজন মিটার, উচ্চতা মাপার স্কেল বা ফিতা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্ট (আই চার্ট) বিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। ক্ষুদে ডাক্তারদের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ক্ষুদে ডাক্তার মোছা: তানহা, ইশরা, সাকিব হাজারী, চতুর্থ শ্রেণির সোহান তারা সকলেই বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। বিদ্যালয়ে ‘যখন তারা সাদা পোশাক গায়ে দিয়েছেন তখন নিজেদেরকে ডাক্তারের মতো মনে হয়েছে। বিদ্যালয়ে আমরা নিজেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সহপাঠি ও ছোটদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য পরামর্শ দিয়ে আসছে বলে জানায়। তারা আরও বলেন আমরা কেউ ওজন মাপি আবার কেউ উচ্চতা মাপি। আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি ঠিক আছে কিনা দেখি। ওইসব আবার খাতায় লিখে হেড ম্যাডামের কাছে জমা দেন বলে জানায়। এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর তুলনামূলকভাবে চটপটে এবং বাকপটু শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষুদে ডাক্তার’ বানাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। প্রতি শ্রেণী বা সেকশনের জন্য ৩ জনের একটি দল হিসেবে ১৫ শিক্ষার্থীর দল বিদ্যালয়ে কাজ করছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিদ্দিকা খাতুন বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুকে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে উদ্বুদ্ধ করা। ক্ষুদে ডাক্তারের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুরা ভবিষ্যতে বড় হয়ে ডাক্তার হবে এবং মানুষের সেবা দিতে উৎসাহী হবে। ছোট থেকেই তাদের সে মানসিকতার উন্নয়ন হবে। তিনি আরও বলেন শিশুদের স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে এ কার্যক্রম খুবই ফলপ্রদ। পাশাপাশি রোগজীবাণু সম্পর্কে ধারণা ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাতে-কলমে শিক্ষা পাচ্ছে তারা। সহপাঠীরাই পরস্পরের মাঝে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জ্ঞানকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: লুৎফুর রহমান বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, মমত্ববোধ জাগরিত করে একজন প্রকৃত সমাজসচেতন, দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এই ক্ষুদে ডাক্তার টিম থেকেই অনেকে ভবিষ্যতে প্রকৃত ডাক্তার হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় এগিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা ও সহমর্মিতা কামনা করেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন