৩ হাজার ৭শত কুমিরসহ ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে ভারতের জেলে বন্দি থাকা প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদারের) আলোচিত কুমিরের খামার।
নিলামে সর্বোচ্চ দামে এই খামারটি ক্রয় করেছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। পিকে হালদারের ব্যাংক ঋণ ও মালিকানা দ্বন্দ্বে ২০১৯ সাল থেকে অনেকটাই ধুঁকে ধুঁকে চলছিলো ময়মনসিংহের ভালুকায় গড়ে ওঠা ময়মনসিংহের ভালুকায় গড়ে ওঠা দেশের প্রথম রেপটাইলস কুমিরে খামার।
সূত্রে জানা যায় ২০০৪ সালে ভালুকা উপজেলার হাতিভের গ্রামে ১৩. ৪০ একর জমিতে চৌদ্দটি পুকুর খনন করে রেপটাইলস ফার্ম লিঃ গড়ে তোলেন মোস্তাক আহমেদ ও ব্যবসায়ী মেজবাউল হক। পরে মালয়েশিয়া থেকে ৭৫ টি বড় কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু ।
খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেন পি কে হালদার। জামানত হিসেবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। ৪ কোটি ২৮ লাখ মূল্যের বন্ধকী জমির বিপরীতে এখন বকেয়া খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০৮ কোটি টাকা।
পরে ২০১৩ সালে মুশতাক আহমেদের কাছ থেকে খামারটি কিনে নেন পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা। খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেন পি কে হালদার। জামানত হিসেবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়।
২০১৯ সাল থেকে ফার্মের ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিদের অনুপস্থিতির কারণে বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধার করতে পারছিল না ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। এছাড়া অব্যবস্থাপনা, খাদ্য ঘাটতি এবং ফার্মের আর্থিক সংকটের কারণে সময়ের ব্যবধানে খামারে কমতে থাকে কুমিরের সংখ্যা।
পরে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত বছরের মার্চে ছয় সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। এতে পরিচালকের দায়িত্ব পান ড. নাঈম আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক। এছাড়া পরিচালক পদে দায়িত্বরতরা হলেন রেজাউল সিকদার, ড. মো. রফিকুল আলম, ফখরুদ্দিন আহমেদ এবং শেখ মো. আব্দুর রশিদ।
রেপটাইলস ফার্মস লিমিটেডের ম্যানেজার ডাঃ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, নিলামে ৩৮ কোটি টাকা বিক্রি হয়ে গেছে। খামারটি
২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫০৭টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতিটি কুমিরের চামড়ার আন্তর্জাতিক বিক্রয়মূল্য ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার। ২০০৪ সালে মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করা ৭৫টি কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু হয় খামারটির। খামারটিতে বর্তমানে কুমিরের সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০টি।
খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক জানান, এই খামার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় খামারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। হুমকিতে পড়ে খামারে কুমিরের পরিচর্যা।
ব্যয় মেটাতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় খামারটি ৷ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ১৫০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। বর্তমানে খামারটিতে দুই হাজার পাঁচ শতাধিক কুমির রয়েছে।
খামারটি বিক্রি হওয়া প্রসঙ্গে এনাম হক বলেন, ঋণ পরিশোধ না করায় খামারটি বিক্রি করেছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। সর্বোচ্চ দাম উঠে ৩৮ কোটি টাকা। খামারটি কিনতে আগ্রহী উদ্দীপন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। উদ্দীপন বর্তমানে নিলামের অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। খামার বিক্রির টাকায় পরিশোধ করা হবে পি কে হালদারের ঋণ।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রেপটাইলস ফার্মটি নিলাম করা হয়েছিল। খামার অধিগ্রহণের জন্য নিলামের সময় উদ্দীপন সর্বোচ্চ দরের প্রস্তাব দেয়। বকেয়া ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও খামারটি প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বেশ আশানুরূপ একটি দাম।