ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রথম ইসলামি ব্যাংকিং সেবা চালু করল রাশিয়া!

প্রথম ইসলামি ব্যাংকিং সেবা চালু করল রাশিয়া!

রাশিয়া দুই বছরের পাইলট প্রোগ্রামের অধীনে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে থেকে ইসলামি ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে।

রাশিয়াতে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মুসলিম রয়েছে। যদিও তারা এতদিন ইসলামিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কিন্তু এ ব্যবস্থাপনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ছিল না। শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রথম ইসলামি ব্যাংক ব্যবস্থা চালু করল দেশটি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ৪ আগস্ট ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রমের সম্ভাব্যতা মূল্যায়নের জন্য একটি আইনে স্বাক্ষর করেন।

পাইলট প্রোগ্রামের অধীনে চারটি মুসলিম অধ্যুষিত প্রজাতন্ত্রে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এর মধ্যে রয়েছে- তাতারস্তান, বাশকোর্তোস্তান, চেচনিয়া এবং দাগেস্তান। এসব অঞ্চলে আগে থেকেই ইসলামিক অর্থায়নের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদি রাশিয়া এই প্রোগ্রামে সফল হতে পারে তাহলে দেশটির বাকী অংশে এ বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ইসলামি ব্যাংকের আলাদা বৈশিষ্ট্য কী? মূলত ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম ইসলামি শরীয়াহ ভিত্তিক পরিচালিত হয়ে থাকে। এখানে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সুদ নেই। সাধারণ ব্যাংকিং কার্যক্রমে ঋণের ক্ষেত্রে একজন গ্রাহক সব ধরনের ঝুঁকি বহন করে। কিন্তু ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম হলো সম্পদ ভিত্তিক, এখানে গ্রাহকের সঙ্গে ইসলামি ব্যাংকের একটা সমবোঝা থাকে। ফলে এক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে শুধু লাভ বা ক্ষতি বহন করতে হয় না। এক্ষেত্রে একজন গ্রাহককে দুটোই বহন করতে হয়।

রাশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপার্ট ইন ইসলামি ফিন্যান্সের নির্বাহী সেক্রেটারি মদিনা কলিমুল্লাহ আল জাজিরাকে বলেন, একজন গ্রাহক আর্থিক সমস্যায় থাকলে তার দ্বারা প্রচলিত ব্যাংক কোনোভাবেই লাভ করতে পারে না। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক তৈরি করা হয়। যা প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রমে করা হয় না। এছাড়া ইসলামি ব্যাংক সমাজের জন্য ক্ষতিকর কোনো খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে না। যেমন- মদ, তামাক এবং জুয়া।

ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা চালুর কারণ হিসেবে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান এসবারব্যাংক এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওলেগ গণেভের বলেন, ইসলামী ব্যাংকিং সেক্টরের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৪০ শতাংশ এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এটি ৭.৭ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসলামিক ব্যাংকিং চালুর ছেনে কারণ হিসেবে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভিজিটর দিয়ানা গালিভা বলেন, ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা চালু করার বিষয়টি রাশিয়ার বহু আগে থেকে। ২০০৮ সালে দেশটিতে অর্থনৈতিক সংকট শুরু হলে তখন থেকেই ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা চালু করার বিষয়টি আলোচনা করা হয়। ওই সময়ে রাশিয়ার ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে পড়লে বিকল্প ব্যবস্থায় নগদ অর্থ সংগ্রহ করার জন্য এটি আলোচনায় আসে। তিনি আল জাজিরাকে আরও বলেন, ২০১৪ সালে রাশিয়া যখন ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়াকে নিজেদের দখলে নেয় তখন রাশিয়ার ব্যাংকগুলো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ভয়ে ছিল। সে সময়ে রাশিয়ার ব্যাংকিং সংগঠন ইসলামিক ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তাব দেয়। গালিভা বলেন, নতুন করে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটির পশ্চিমা বিশ্বের চাপের মুখে পড়ে। ফলে এ চাপ এড়াতে দেশটি এখন মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে। এজন্যই তারা ইসলামিক অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। খবর আল জাজিরা

সংবাদটি শেয়ার করুন