আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার অবিলম্বে মুক্তি চেয়েছে।
সোমবার (২৮ আগস্ট) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে খাদিজাকে বিচার ছাড়া কারাবন্দি রাখার এক বছর পূর্তিতে এ দাবি জানিয়েছেন অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন উপ-আঞ্চলিক পরিচালক নাদিয়া রহমান।
অ্যামনেস্টির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নাদিয়া রহমান বলেন, খাদিজাকে এক বছর ধরে কারাবন্দী করা এবং বারবার জামিন না দেয়া বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের পরিহাস ও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে, ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করতে হবে এবং নিজ ভাগ্য নির্ধারণের জন্য কঠোর আইনের অধীনে তাকে কারাগারে রাখা উচিৎ নয়।
খাদিজাকে নির্বিচারে আটক করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, সরকারের কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ মানবাধিকারকে ক্ষুণ্ণ করতে এবং সমালোচক ও অ্যাক্টিভিস্টদের নিপীড়ন করতে আইনটি ব্যবহার করে চলেছে। ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, খাদিজাসহ যারা নির্বিচারে বাংলাদেশে আটক আছেন, তাদের সবাইকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। এছাড়া খাদিজার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তাকে নিয়মিত পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে এবং তাকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অবস্থায় রাখা উচিৎ।’
মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, খাদিজাতুল কুবরা ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ২০২০ সালে নভেম্বরে ‘হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পেইজে ক্যাম্পাসের রাজনীতি নিয়ে একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করেছিলেন। প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালে ২৭ আগস্ট খাদিজাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরদিন তাকে ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয় হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা ইউটিউবে আপলোড করা ওয়েবিনারের একটি রেকর্ডিং দেখেছিলেন, যা একজন অতিথি বক্তা আপলোড করেছিলেন। পূর্বে কানাডায় অবস্থানরত একজন বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তা সরকারের সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছিলেন বলে মনে করা হয়। এর প্রেক্ষিতে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা’ এবং প্রধানমন্ত্রীকে ‘মানহানি’ করার অভিযোগে ডিএসএ’র অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়াও অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদিজার জামিনের আবেদন বেশ কয়েকবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিডনি সমস্যাসহ চিকিৎসাজনিত সমস্যা দেখা দেওয়া সত্ত্বেও পরিবার এবং গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে- খাদিজাকে চলতি বছরের শুরুতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য সংরক্ষিত একটি সেলে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের ১০ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার জামিন শুনানি চার মাসের জন্য স্থগিত করেন। অ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল খাদিজার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন জোগাড় করতে এবং তার অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে।
