ঢাকা | সোমবার
৩০শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৫ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম নগরীতে ফের জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে নগরবাসী

চট্টগ্রাম নগরীতে ফের জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে নগরবাসী

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হয় চট্টগ্রামকে। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এমন একটি শহর যে শহর ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনা করা যায় না। বিশ্বের চোখও থাকে চট্টগ্রাম বন্দরনগরীর প্রতি। প্রচলিত একটি কথা শুনি বর্ষার সময় ! চট্টগ্রাম ডুবলে ডুবে যাবে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানেই বাংলাদেশের উন্নয়ন। চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে। জনসাধারণের প্রশ্ন তা কি পরিকল্পনা করে করা হচ্ছে ? উন্নয়ন ভোগ করতে পারবে তো নগরবাসী?

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরীতে শনিবার ২৬ ই আগস্ট রাত থেকে রবিবার সারাদিন শুরু হওয়া বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বারী বর্ষনে নগরীর বিভিন্ন নিম্নাচল পানিতে তলিয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সহকারী আবহাওয়াবিদ সুমন সাহা জানান, যেহেতু বর্ষাকাল এমন আবহাওয়া আরও কয়েকদিন থাকবে। কখনও মুষলধারে, কখনও থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম নদী বন্দরকে এক নম্বর নৌ সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বাকলিয়া, চকবাজার, চান্দগাঁও, আগ্রাবাদ ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। নালাগুলো দিয়ে পানি না নামায় সামান্য বৃষ্টিতে এমন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সকাল ১০ টায় বাদুরতলা এলাকার রাস্তার পাশের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়। দোকানিরা জানান, বৃষ্টির পানি দোকানে ঢুকে যাওয়ায় জিনিষপত্র নষ্ট হচ্ছে।

বাদুরতলা এলাকার দোকানি শফিকুল আলম জানান, শনিবার রাতে প্রবল বৃষ্টির পর তার দোকানে পানি ঢুকে যায়। বিকেলে সেই পানি অপসারণ করেন তিনি। তিনি বলেন, আরও বৃষ্টি হলে আবার দোকানে পানি ঢুকবে, তাই এখন আর পানি অপসারণ করছি না। এই কারণে আজ অধিকাংশ দোকান বন্ধ আছে। গতকাল রাত থেকে প্রবল বৃষ্টিতে চকবাজার এলাকার চক সুপার মার্কেটের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়ে। দোকানিরা জানান নিচতলায় নোংরা পানি ঢুকে দোকানের মূল্যবান জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তেলিপট্টি থেকে চকবাজার কাঁচাবাজার পর্যন্ত রাস্তা হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তার পাশের নর্দমা থেকে উপচে পড়া নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন পথচারীরা। এছাড়া ও দেখা গেছে অনেক এস এস সি পরিক্ষার্থী জলাবদ্ধতা’র কারনে পরিক্ষা হলে যেতে পারছেন না।

সোমা বিশ্বাস পরিক্ষার্থী তিনি বলেন, ঘর থেকে শুকনো কাপড় পরে বের হয়েছি পরিক্ষার হলে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাস্তায় এসে দেখি কোমড় পর্যন্ত পানি। আমরা কবে এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবো? অবহেলিত চট্টগ্রামে কি দেখার মতো কেউ কি নেই? এই পশ্চিম বাকালিয়া ডিসি রোড এলাকার বাসিন্দা তাপসী ঘোষ চকবাজার কাঁচাবাজারের সামনের রাস্তা দিয়ে নোংরা পানি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি জানান, তার শাশুড়ি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, রাস্তায় খুব কম যানবাহন চলাচল করছে। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করে আমি মাত্র দুটি খালি রিকশা পেলাম, কিন্তু চালকরা খুব বেশি ভাড়া দাবি করছিলেন। তাই, আমাকে নোংরা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ২০১৭ সাল থেকে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, কিন্তু প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পাঁচ বছর পরও তার কোনো সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ নগরবাসীর। জলাবদ্ধতার বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, কিছু কিছু জায়গায় নালাগুলো জ্যাম থাকার কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। যা সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতাধীন নয়। সিডিএ মেগা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলীকে বার বার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে ৩ মাস আগে, সংবাদ সম্মেলনে শাহ আলী সাংবাদিকদের বলেন, তখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৭৬ দশমিক ২৬ শতাংশ ছিল। অনেকেই আবার খাল ও নর্দমা দিয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) দায়ী করেছেন। তাদের অভিযোগ, চসিকের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা নর্দমাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করেন না। যোগাযোগ করা হলে চসিক পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মোবারক হোসেন বলেন, সিডিএ নগরীর ৩৬টি বড় খাল নিয়ে কাজ করছে এবং যতদিন পর্যন্ত তারা এগুলো চসিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর না করছে, ততদিন এসব খালে চসিক কিছু করতে পারে না। ততদিন পর্যন্ত তাদেরকেই খালগুলো খনন করে পানি চলাচল সুগম রাখতে হবে। জানতে চাইলে মোবারক বলেন, চসিক-এর আওতাধীন নর্দমা ও খাল নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। এর পর লোকজন আবার প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যাগ ফেললে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন