কুড়িগ্রামের উলিপুরে রোপা আমন পরিচর্যায় ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। মজুরি কম থাকায় চাহিদা বেড়েছে নারী শ্রমিকের। চলতি আমন মৌসুমে সবুজ নীলিমায় একাকার বিস্তীর্ণ প্রতিটি ফসলের মাঠ। দিগন্তজুড়ে যেদিকে তাকাই শুধু সবুজ আর সবুজ। এখন রোপা-আমন ধান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক ও শ্রমিকেরা। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকেরা আমন পরিচর্যায় ভুমিকা পালন করে যাচ্ছেন। বোরো কর্তন শেষে রোপা-আমন চাষে কোমর বেঁধে মাঠে নামেছে তারা। বর্তমানে ধান গাছের পরিচর্যায় যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার পৌরসভাসহ ১৩ টি ইউনিয়নের রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৪ হাজার ৫শ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে লক্ষ্য চেয়েও বেশি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মাঠপর্যায়ে রোপা আমন চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মাঠ এখন কৃষকের সবুজ স্বপ্নে ছেঁয়ে গেছে। দিগন্ত যেন সবুজ কার্পেটে মোড়ানো এক গালিচা। দৃষ্টি জুড়ে এখন সবুজ ধানের প্রান্তর। উপজেলার প্রতিটি মাঠ এখন কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে।
কেউ ধান গাছের আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার কেউ সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। সবুজ পাতায় বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। রোপা-আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশায় কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। কৃষকের স্বপ্নের আমনের পরিচর্যায় ব্যাস্ত সময় পার করছেন নারী শ্রমিকেরা। তারা জানান, আমরা সমাজে অবহেলিত নারী শ্রমিক। আমরা অভাবের তারনায় শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাই। আমরা পুরুষ শ্রমিকদের মত সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যাই। তারপরেও আমারা অবহেলিত শ্রমিক হিসেবে মজুরি অনেক কম।
পৌরসভার নাড়িকেলবাড়ি ব্যাপারীপাড়া গ্রামে আমনের জমিতে কাজ করতে আসা নারী শ্রমিক ভারতী রানী (৫৫) বলেন, আমি গরিব মানুষ। নিরুপায় হয়ে আমনের পরিচর্যার কাজে শ্রমিক হিসাবে কাজ করছি। মাত্র মজুরি ২’শ টাকা দেন। যা দিয়ে অভাব অনটন সংসারের কিছুই হয়না। আমরা নারী শ্রমিক বলেই আমাদের মজুরি অনেক কম। তিনি আরও বলেন, আমরা পুরুষ শ্রমিকদের মত সারাদিন রৌদ্রে কজ করি। এত বৈষম্য যা মেনে নেয়া যায় না।
এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নারী শ্রমিকদের মধ্যে সুবলা রানী (৪৫), সুফিয়া বেগম (৫৫), জোসনা রানী (৪০) ও বালা রানী (৬০) সহ আরও অনেকে বলেন, আমরা নারী শ্রমিক বলেই আমাদের মজুরি অনেক কম। সারাদিন কাজ করে আমাদের মজুরি দেন মাত্র ২’শ টাকা। আমরা মজুরি বেশি চাইলে আর কাজে নেননা। তারা আরও বলেন, বর্তমান বাজারে যে ঊর্ধগতি সামান্য মজুরি দিয়ে কিছুই হয়না।
থেতরাই ইউনিয়নের হারুনেফড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক আশরাফ আলী খন্দকার বলেন, নারী শ্রমিকেরা আমনের পরিচর্যায় অনেক ভুমিকা পালন করছেন। আমন চাষ অনেক ব্যায় বহুল হলেও ধান গাছে সময়মতো পানি পাওয়ায় এখন গাছ সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে। চারিদিকে যেন সবুজের সমারোহ। যেদিকে তাকাই দৃষ্টি যেন জুড়িয়ে যায়। এবার বড় ধরনের বৃষ্টির পানিতে বন্যা না হলে আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে আমরা অনেক উপকৃত হব এবং বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব বলে মনে করছি।
পৌরসভার নাড়িকেলবাড়ি ব্যাপারীপাড়া গ্রামের আমন চাষি নয়ন সরকার জানান, এবারে আমি ৫ একর জমিতে আমনের চাষ করেছি। ধান ঘরে উঠানো পর্যন্ত একর প্রতি খরচ হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা। একর প্রতি আমন ধানের আশা করছেন ২৫ থেকে ৩০ মণ। যার বাজার মূল্য হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। যা একর প্রতি খরচের পর থাকবে মাত্র ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। তা আবার আবহাওয়া অনুকুল থাকলে পাওয়া যাবে। তা না হলে লসে পরতে হবে। নারী শ্রমিকদের বিষয়ে তিনি বলেন, সমাজের মধ্যে অবহেলিত নারী শ্রমিক তারাও কাজ করেন। তাদের পারিশ্রমিক কম থাকায় নারী শ্রমিকদের আমনের পরিচর্যায় অনেক চাহিদা বেড়েছে। তবে নারী শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন বলেন, অধিক ফলনের জন্য পরিমিত সার ব্যবহার এবং সার্বিক পরিচর্যায় কৃষকদের সচেষ্ট হতে আমরা সব সময়ই পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবার এ উপজেলার কোথাও তেমন কোন পোকা-মাকরের আক্রমণ নেই। ফলে আমরা আশা করছি, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে রোপা-আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে।
আনন্দবাজার/শহক