আন্তর্জাতিকভাবে ২০০ পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের স্বীকৃতি পাওয়ার মধ্যে দিয়ে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পখাতে নতুন এক মাইলফলক অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানায়, সম্প্রতি নতুন করে দুই কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদ অর্জন করে। ফলে পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে দ্বিশতকের মাইলফলক অর্জিত হয়। নতুন যে দুটি কারখানা পরিবেশবান্ধব সনদ পেয়েছে, সেগুলো হলো গাজীপুরের লিডা টেক্সটাইল অ্যান্ড ডায়িং ও লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘টেকসই শিল্পায়নের পথে এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণমাইলফলক।’
জানা যায়, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে মনোযোগী হয়েছেন দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে আগ্রহী হয়ে উঠেন তারা। ফলে বিশ্বে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশবান্ধব কারখানার মুকুট এখন বাংলাদেশের।’
পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা সাজ্জাদুর রহমান মৃধার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম পরিবেশবান্ধব কারখানা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। পাবনার ঈশ্বরদী ইপি জেডে তিনি স্থাপন করেন ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিস্টু ও। তার দেখানো পথ ধরেই দেশে দুই শতাধিক পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ে উঠেছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পাশাপাশি শিপইয়ার্ড, জুতা ও ইলেকট্রনিক খাতেও এখন পরিবেশবান্ধব কারখানা আছে। বাণিজ্যিক ভবনও হচ্ছে পরিবেশবান্ধব।
বিশ্বের বেশ কিছুপ্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিণ বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি)। তারা ‘লিড’
নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দেয়। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জিঅ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন।
এই সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। সে জন্য নতুন ভবন নির্মাণ কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করে আবেদন করা যায়। লিড সনদের জন্য ৯টি শর্তপরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট রয়েছে।
এর মধ্যে পয়েন্ট ৮০-এর ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ হলে ‘লিড গো ল্ড’, ৫০-৫৯ হলে ‘লিড সিলভার’ ও ৪০-৪৯ হলে ‘লিড সার্টিফায়েড’ সনদ মেলে।বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব স্থাপনাগুলোর অধিকাংশই ইউএসজিবিসি’র সনদ পেয়েছে।
বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে লিড সনদ প্রাপ্ত ২০০ পোশাক ও বস্ত্র কারখানার মধ্যে ৭৩টি লিড প্লাটিনাম, ১১৩টি গোল্ড, ১০টি সিলভার ও ৪টি সার্টিফায়েড সনদ পেয়েছে।
লিড সনদে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে বাংলাদে শের ময়মনসিংহের গ্রিন টেক্সটাইল লিমিটেড এখন বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব কারখানা। ১১০ নম্বরের মধ্যে তারা পেয়েছে ১০৪। শুধুতারাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া পরিবেশবা ন্ধব ১০টি কারখানার মধ্যে ৮টি বাংলাদেশের। সেগুলো হচ্ছে-রেমি হোল্ডিংস, ফতুল্লা অ্যাপারেলস, লিডা টেক্সটাইল অ্যান্ড ডায়িং, লিজ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, তারাসিমা অ্যাপারেলস, প্লামি ফ্যাশনস ও সিলকেন সুইং।
আনন্দবাজার/শহক