ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিনির মূল্য বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে মৌ চাষ

চিনির মূল্য বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে মৌ চাষ

পাল্লা দিয়ে চিনির মূল্য বেড়ে যাওয়ায় উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার একমাত্র মৌ মাছির খামারটি হুমকির মুখে পড়েছে। উৎপাদিত মধুর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ খামারির। এতে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে মৌ খামারটি।

জানা যায়, সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের টিয়াগাছা গ্রামের সাদা মিয়া ২০১৪ সালে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন মৌ চাষ। মাত্র ২০টি বক্স মৌ মাছি দিয়ে তিনি খামার শুরু করেন। পুঁজি ছিল এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। বর্তমানে সাদা মিয়ার খামারে মৌ বক্স রয়েছে ১৬০টি। প্রতিটি বক্সে মৌ মাছি রয়েছে ১৮-২০ হাজার। প্রতি বছর মৌ মাছি বিক্রয় করেন দুই লক্ষ এর বেশি। বছর নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত চলে মধু সংগ্রহ। এ সময়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে মৌ বক্স নিয়ে জয়পুরহাটে যান খামারি সাদা মিয়া।

এছাড়া ধনিয়া ও কালোজিরা ফুলের মধু সংগ্রহে ফরিদপুর ও শরীয়তপুরে, লিচু ফুলের মধু সংগ্রহে দিনাজপুর, মিষ্টিকুমরা ফুলের মধু সংগ্রহে ঠাকুরগাঁও, তিল ফুলের মধু সংগ্রহে পঞ্চগড় এবং বিচিত্র সব ফুলের মধু সংগ্রহ করতে সুন্দরবনেও যান তিনি।

খামারি সাদা মিয়া বলেন, খামার থেকে চলতি মৌসুমে ৪ মেট্রিক টন ২৮০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে মধু রিফাইনের কোনো মেশিন না থাকায় উৎপাদন কম হয়েছে। মেশিন থাকলে আরও বেশি মধু উৎপাদন করা যেতো। মধু বিক্রয় করা হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। মধু বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত বাজার না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান সাদা মিয়া।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষিমেলা, বাণিজ্যমেলা অথবা অন্যান্য মেলায় স্টল সাজিয়ে মধু বিক্রি করতে হয়। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানি পাইকারি মধু ক্রয় করলেও তারা উপযুক্ত মূল্য দিতে চান না। খুচরা গ্রাহকরা মধু ক্রয় করে সামান্য পরিমাণে। অনলাইনে মধু বিক্রয় করা হলেও ক্রেতার সংখ্যা বেশি নেই। ফলে মধু বিক্রয়ের জন্য নির্ধারিত বাজার প্রয়োজন।

সাদা মিয়া আরও বলেন, মৌ মাছির প্রধান খাবার চিনি। এ জন্য বছরের সাত মাস চিনি ক্রয় করতে হয়। খামারে প্রতিমাসে ৫০ কেজি ওজনের ১২ বস্তা চিনির প্রয়োজন হয়। সাত মাসে ৮৪ বস্তা (৪ হাজার ২০০ কেজি) চিনি ক্রয় করতে হয়। তবে বর্তমানে চিনির বাজার বেশ চড়া। প্রতিকেজি চিনি এখন ১৪৫ টাকা। বাড়তি দামে চিনি ক্রয় করে মৌ মাছি পালন সম্ভব হচ্ছে না।

ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু বলেন, সাদা মিয়া একজন আদর্শ মৌ চাষি। তার খামারে কাজের মাধ্যমে এলাকার অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হয়েছে। সাদা মিয়াকে সহযোগিতা করে টিকিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, মধু সংগ্রহের সুবিধার্থে সরকারিভাবে মধু রিফাইন মেশিনের আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে তাকে সরবরাহ করা হবে। মৌ চাষি সাদা মিয়া যেন ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারে সেই জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। গাইবান্ধা জেলা কৃষি সস¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, সাদা মিয়ার ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠা মৌ খামারটি টিকিয়ে রাখতে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন