দেশের অন্যতম শিল্পনগরী ও উত্তরের সমৃদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র নীলফামারীর সৈয়দপুরে চাহিদার তিন ভাগের মাত্র একভাগ বিদ্যুত সরবরাহের কারণে চরম লোডশেডিং চলছে। এর ফলে ভয়াবহ ভোগান্তি পোহাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষ। লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে শিল্প কল কারখানার উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
নর্দার্ন ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী (নেসকো) সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন থেকেই চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। আজ বুধবার (১৮ জুলাই) কেন্দ্র থেকে ৩০ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে বরাদ্দের মাত্র ১২ মেগাওয়াট। গতকাল মঙ্গলবারও একইভাবে অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ পাওয়া গেছে। ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। দিনরাত এভাবে দীর্ঘ সময় বিদ্যুত না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে সব ধরণের উৎপাদন কার্যক্রম।
সৈয়দপুর বিসিক শিল্পনগরীর বিভিন্ন শিল্প কারখানাসহ শহরের পাড়া মহল্লায় গড়ে ওঠা রপ্তানীমুখি মেশিনারি পণ্য, যন্ত্রাংশ উৎপাদনকারী শতাধিক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও ঝুট কাপড় থেকে পোশাক তৈরীকারী দুই শতাধিক ক্ষুদ্র গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে পড়েছে। এর সাথে অন্যান্য কারখানাও ধুকছে। অর্ধ শতাধিক বেকারী, জুতা তৈরীর দোকান, পাটজাত পণ্য নির্মাণ কারখানা, পরিত্যক্ত পলিথিন থেকে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে গুলের কৌটা ও খেলনা বানানোর ফ্যাক্টরীও স্থবির হয়ে পড়েছে।
সেইসাথে আবাসিক বিদ্যুতের অভাবে প্রখর রোদের কারণে সৃষ্ট তাপদাহে জনজীবনে ত্রাহি অবস্থা দেখা দিয়েছে।বাসা-বাড়ি, অফিস, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। দাপ্তরিক কাজসহ গৃহস্থালি কাজেও সমস্যা হচ্ছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নেই গ্রাহক। ব্যাটারী চালিত চার্জার ভ্যান, রিক্সা, অটো, ইজিবাইক বিদ্যুত না পেয়ে চার্জ করতে পারেনি বিধায় গাড়ী বের করা সম্ভব হয়নি। ফলে উপার্জন বন্ধ হয়ে উপোষ করার অবস্থায় অনেক চালক।
সবচেয়ে দূর্ভোগ দেখা দিয়েছ বয়স্ক, শিশু, শিক্ষার্থী আর রোগীদের নিয়ে। বাসা-বাড়িতে অবস্থান করলে আইপিএস বা চার্জার লাইট বা ফ্যান চালিয়ে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন। চার্জ করার মত সামান্য সময়ও বিদ্যুৎ না পেয়ে। এতে শিশুরা ও বয়স্ক এবং অসুস্থ নারীপুরুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
এদিকে ক্লাস চলাকালে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে ঘেমে দূর্বিসহ কষ্ট করতে হচ্ছে কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীরাসহ শিক্ষক কর্মচারীরাদের। অনেকে হিটস্ট্রকে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হচ্ছে। অন্যদিকে হাসপাতালে বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার অসহ্য ভোগান্তিতে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন। অনেকে রাতে হাসপাতাল ছেড়ে অন্ধকারেই বাড়ি ফিরেছে। কোন কোন রুগি বিছানা ছেড়ে ছাদে ও ভবনের বাইরে গাছের নিচে বসে রাত কাটিয়েছে। এসংক্রান্ত ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ক্ষুদ্র গার্মেন্টস কারখানা এম আর ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারি ও সৈয়দপুর রফতানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্টস মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান দুলু বলেন, করোনা পরবর্তী সকল সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সৈয়দপুরের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার মালিকরা যখন আবার মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, ঠিক তখনই লোডশেডিং বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।
নেসকো সৈয়দপুর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান ভুইঞা জানান, সৈয়দপুরে প্রতিদিনের বিদ্যুৎ এর চাহিদা ৩০ মেঘাওয়াট। কিন্তুু আজ কেন্দ্রীয় ভাবে সৈয়দপুরের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১২ মেঘাওয়াট। অথাৎ অর্ধেকেরও বেশি ঘাটতি। তাই সারাদিন লোডশেডিং চলছে।
তিনি বলেন, সৈয়দপুর নেসকো বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে না। কেন্দ্র থেকে যা পায় তা বিতরণ করে। বরাদ্দ পেলেই পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে। কবে নাগাদ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এবং কেন এই ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি সুনির্দিষ্ট কিছুই জানাতে পারেননি।
আনন্দবাজার/শহক