আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই বৃদ্ধি পেয়েছে প্যাকেটজাত চিনির দাম। কোনো কোনো কোম্পানি চিনির কেজি ১৪০ টাকা নির্ধারণ করেই বাজারে সরবরাহ শুরু করেছে। মাস দুয়েক আগে সরকার খোলা চিনির কেজি ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এর চেয়ে বেশি দরে।
ভোক্তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়ানোর ছুতা খোঁজে। সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান তাতে সায় দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে ব্যবসায়ীদের সুযোগ তৈরি করে দেয়। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট আরও দীর্ঘ হয়।
চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, বিশ্ববাজারে এখনও অপরিশোধিত প্রতি টন চিনির দাম ৬৬০ ডলারের বেশি। ডলারের সংকটে বর্তমানে শতভাগ মার্জিন দেয়ার পরও এলসি খোলার জন্য অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ অর্থ দিতে হচ্ছে। তবু এলসি খুলতে পারছেন না আমদানিকারকরা। কুরবানির ঈদের আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুল্ক কমানো বা দাম সমন্বয়ের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এতে কোম্পানিগুলোর লোকসান হচ্ছিল। এজন্য তারা দাম বাড়ানোর পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছেন।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কারণে গত ৬ জুন দেশের বাজারে খোলা চিনির কেজি ১৪০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৫০ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছিল চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।
এতে বলা হয়, আমদানি মূল্য, ডলারের বিনিময় হার, বর্ধিত ব্যাংক সুদ, জাহাজ বিলম্বিত জরিমানা এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনা করে দাম সমন্বয় করতে হবে। তবে তাতে সায় দেয়নি সরকার।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে চিনির দর পর্যালোচনা করে দেশে খুচরা পর্যায়ে খোলা চিনির কেজি ১৩৫ ও প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৪০ টাকা নির্ধারণের পরামর্শ দিয়ে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় না থেকে এরই মধ্যে দাম বাড়িয়ে নতুন প্যাকেট বাজারজাত শুরু করেছে চিটি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
গতকাল শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে ১৪০ টাকায় এক কেজি চিনির প্যাকেট কেনার পর এক সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, জিনিসপত্রের আসলেই অনেক দাম। এক বছরে চিনির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেল। ১৪০ টাকায় কিনতে হলো চিনি। সরকারি চাকরি করলেও বাজারে এলে আমার মাথা ঘোরে। সাধারণ মানুষের কষ্ট নিশ্চয়ই আরও অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, খোলা চিনির কেজি ১৩৫ এবং প্যাকেট ১৪০ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জেনেছি। আগামীকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগে কেউ দাম বাড়িয়ে বাজারে সরবরাহ করছে কিনা সেটা আমার জানা নেই।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজার থেকে এখনও অপরিশোধিত প্রতি টন চিনি ৬৬০ ডলারের বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে। এ বিষয়টি ট্যারিফ কমিশনকে জানানো হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাজারে চিনির দর পর্যালোচনা করে দেবে, খুচরা পর্যায়ের সরকার এলসি খুলতে পারছেন না আমদানিকারকরা। বর্তমানে শতভাগ মার্জিন দেয়ার পরও ডলারের দাম আরও বেড়ে যায় কিনা সেই অনিশ্চয়তা থেকে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ অর্থ দিতে হচ্ছে এলসি খোলার জন্য।
বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম বলেন, চিনির দাম বাড়ানোর আলোচনা হয়েছে জেনেছি। তবে এখন চিনির বাজার পড়তির দিকে। কারণ ভারত থেকে অবৈধভাবে প্রচুর চিনি আসছে। সেই চিনি বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। এখন বাড়তি দাম নির্ধারণ করে লাভ কী হবে, যদি বাজারে চাহিদা না থাকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চিনির বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, চিনির চাহিদা রয়েছে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টনের। চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটাতে আমদানি করে।
সূত্র: সমকাল
আনন্দবাজার/শহক