ঢাকা | বুধবার
২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের অনুমোদন

মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের অনুমোদন

মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৃস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বিকেল ৩টায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যা বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের পঞ্চম এবং শেষ বাজেট। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পঞ্চম বাজেট।

এরই মধ্যে দেশের ৫২তম বাজেট পেশ করতে লাল ব্রিফকেস হাতে নিয়ে সংসদে প্রবেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

আকারের দিক থেকে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেট ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড়। চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩) এ বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা নতুন অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকায়।

বরাবরের মতো এবারও উত্থাপিত হতে যাচ্ছে ঘাটতি বাজেট। নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছর ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা। সেই লক্ষ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের মতো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশ। তবে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ১ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়েছে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থবছর শেষ হয়ে এলেও রাজস্ব আদায়ে এখনও প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রয়ে গেছে। রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত অন্যান্য উৎস থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আগামী বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। চলতি অর্থবছর থেকে শুরু করে বিগত দুই অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা হলেও এবার তা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নারীদের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ ও তৃতীয় লিঙ্গের করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ধার্য হয়েছে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। গত বছর এ পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা ও ৯৫ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত

২০২৩-২৪ বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ৭৫ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা। পরিবহন খাতের পরেও বরাদ্দের তালিকায় এগিয়ে আছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতে ৪৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। বরাদ্দ বিবেচনায় তৃতীয় অবস্থানে আছে শিক্ষাখাত, যেখানে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ২৯ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।

এ ছাড়া গৃহায়ণ ও কমিউনিটি খাতে ২৭ হাজার ৪৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যখাতে ১৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৬ হাজার ২০৪ কোটি টাকা ও কৃষি খাতে ১০ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার কথা আছে।

বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়

২০২৩-২৪ বাজেটে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দে শুরুতেই এসেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। মন্ত্রণালয়টি ৪০ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ৩৪ হাজার ৬২ কোটি টাকা ও বিদ্যুৎ বিভাগ ৩৩ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে।

এর বাইরে রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ১৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা ও সেতু বিভাগ ৯ হাজার ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে।

বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রকল্প

প্রকল্পভিত্তিক গুরুত্বের জায়গা থেকে ২০২৩-২৪ বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এরপরেই মাতারবাড়ি পাওয়ার প্রজেক্ট, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ আগামী অর্থবছরে আগ্রধিকারের তালিকায় সম্মুখে আছে।

গুরুত্বের তালিকায় আরও আছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটি ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন