ফরিদপুর সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌবন্দর এলাকা নৌযান চলাচলের উপযোগী রাখার জন্য খননকাজ শুরু করেছিল বিআইডব্লিউটিসি। কিন্তু খননকৃত বালু ভূবনেশ্বর নদের মূল ধারায় ফেলায় চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের চরহাজিগঞ্জ বাজার এলাকায় নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী এসব বালু বাজারসংলগ্ন এলাকায় ফেলার দাবি জানিয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ফরিদপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ জানুয়ারি থেকে ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌবন্দর এলাকা থেকে ৮ কিলোমিটার ভাটিতে চরভদ্রাসন উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের চরহাজিগঞ্জ বাজারসংলগ্ন পদ্মা নদীতে খননকাজ শুরু হয়। বিআইডব্লিউটিসির রূপসা প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। হাইড্রোগ্রাফি সার্ভে প্রতিবেদনের আলোকে ওই এলাকায় নদীর দেড় কিলোমিটার অংশে এ খননকাজ করার কথা। এই প্রকল্পের আওতায় গাইড ওয়াল নির্মাণ ও পাইপ বসানোরও কাজ হয়েছে। এ জন্য বরাদ্দ করা হয় ৩৭ লাখ টাকা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভূবনেশ্বর নদ খনন করে যে বালু ওঠে আসছে, তা চরহাজিগঞ্জ বাজার থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার দূরে ভূবনেশ্বর নদের মূল ধারায় ফেলা হয়। স্থানীয়দের মত পদ্মা নদী ও ভূবনেশ্বর নদের ভাঙনের ফলে নদের যে নতুন ধারা বাজার ঘেঁষে চলে গেছে সে জায়গায় বালি ফেলা হোক। কারণ, ভূবনেশ্বর নদের মূল ধারায় বালু ফেললে ওই বাজারে ভাঙন শুরু হবে। এ ছাড়া নদীভাঙনে বাজারসংলগ্ন এলাকার ফসলি জমিও বিলীন হয়ে যাবে।
এ পরিস্থিতিতে ওই এলাকায় বালু ফেলা বন্ধের দাবিতে ৫ ফেব্রুয়ারি চরহাজিগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। এই দাবিতে তাঁরা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
৬ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের ফলে পদ্মা নদীর শাখা ভূবনেশ্বর নদের যে নতুন ধারাটি সৃষ্টি হয়েছে সেটি হাজীগঞ্জ বাজারের পশ্চিমপাশ ঘেঁষে চলে গেছে। এলাকাবাসী জানায়, এ ধারা এই বাজার থেকে আরও অন্তত ২০০ মিটার দূরে ছিল। বর্তমানে যে জায়গা দিয়ে নদের ধারা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি ব্যক্তি মালিকানাধীন।
বাজারের ব্যবসায়ী আবু বক্কর বিশ্বাস বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে হাজীগঞ্জ বাজার। ওই ভাঙনের ফলে গাজিরটেক ইউপি ভবন, চারটি সরকারি খাদ্য গুদামসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যায়।
এছাড়াও বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, হাজীগঞ্জ বাজার কমপক্ষে ১৫০ বছরের পুরোনো। নদীর গতি পরিবর্তন হওয়ার পর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি নদীতে চলে যায়। ওই জমির খাজনা এখনো তাঁরাই পরিশোধ করেন।
বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, নদী খননের কাজ করার পর কোথায় বালি ফেলা হবে, তার জন্য আট সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। এ কমিটির প্রধান জেলা প্রশাসক। ইউএনও, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তারা এই কমিটির সদস্য। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তারা যে জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে, সে জায়গায় খনন করে তোলা বালু ফেলা হচ্ছে।
চরভদ্রাসনের ইউএনও তানজিলা কবির জানান, বাজারের ব্যবসায়ীদের দাবি যুক্তি সংগত। বিআইডব্লিউটিসিকে নদের মূল উৎস খালি করে দিতে বলা হয়েছে এবং এবং বাজারসংলগ্ন জায়গায় বালু ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
চরভদ্রাসনের হাজীগঞ্জে বিআইডব্লিউটিসি খননকাজের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রকৌশলী মো. শওকতউজ্জামান বলেন, বাজারসংলগ্ন জায়গায় বালু ফেলার ব্যবস্থা করতে হলে নতুন করে গাইড ওয়াল তৈরি ও পাইপ টেনে আনতে হবে। এতে আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির ফরিদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ঋদ্ধি রুবাইয়াৎ বলেন, গত ২১ জানুয়ারি প্রথমে বালু কেটে রাখার জন্য গাইড নির্মাণ ও পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়। ওই কাজ শেষ হওয়ার পর ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নদীর খননের কাজ শুরু হয়। দুই দিন কাজ শুরুর পর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে এবং ইউএনওর নির্দেশনায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন কাজ বন্ধ রয়েছে।
আনন্দবাজার/কআ