ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখলের পায়তাঁরা

বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখলের পায়তাঁরা

শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়িখালে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি দখলের পায়তাঁরা হচ্ছে। ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সবুজ গ্রামের আমজাত মিনার বাড়ির সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের ওই জমিতে জোরপূর্বক সাইন বোর্ড টাঙ্গানোর অভিযোগ উঠেছে হাতারপাড়ার মরহুম শেখ জাহাঙ্গীর আলমের সাবেক স্ত্রী একাধিক মামলার আসামী মোছাঃ সেলিনা পারভীন ওরফে বিউটি (৪০) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে। সেলিনা পারভীন বিউটি ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার বনানীপাড়া গ্রামের মৃত শহর আলী বিশ্বাসের কন্যা।

এ ঘটনায় কবুতর খোলা গ্রামের মরহুম শেখ আকবর ওরফে শেখ একাব্বরের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম শেখ ফজলুল হকের পরিবার ও স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, সেলিনা পারভীন ওরফে বিউটির স্বামী মৃত জাহাঙ্গীর আলমের ওয়ারিশ সূত্রে জমিটির মালিকানা দাবি করা হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার পিতার নামের সাথে সেলিনা পারভীনের সাবেক শ্বশুরের নামের মিল থাকায় সুকৌশলে ওই জমির মালিকানা দাবি করছে সেলিনা পারভীন গং। কিছুদিন আগে এলাকার একটি জালিয়াত চক্রের সহযোগীতায় ওই জমিতে জোরপূর্বক সাইনবোর্ড টাঙ্গানো হয়। অথচ যুগযুগ ধরে জমির মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি দখলে আছেন। পরিবারটি ঢাকায় বসবাস করার সুবাদে সেলিনা পারভীন গং জমিটি দখলের পায়তাঁরা করছে। জমিতে সাইবোর্ড লাগানোর পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে।

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল (৪৮) নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমরা জানি বীর মুক্তিযোদ্ধা মজিবর রহমান গং এই জমিটির মালিক। হঠাৎ মৃত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রীর দাবিদার সেলিনা পারভীন নামে এক মহিলা জমিতে হঠাৎ সাইনবোর্ড লাগায়। ওই মহিলার কথাবার্তা ও আচরণ দেখে সুবিধার মনে হচ্ছে না। কথায় কথায় মানুষকে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে বেড়ায়। আমরা এলাকায় এই মহিলাকে আগে কেউ দেখিনি। সে মৃত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী কিনা তাও জানিনা।

সূত্রমতে জানা যায়, হাতারপাড়া মৌজায় সিএস খতিয়ান নং-৬৪, সিএস দাগ নং-৭৫৬। সিএস খতিয়ানের মালিক ও ওয়ারিশ থেকে জায়গাটি ক্রয়সূত্রে মালিক হন একেএম জহুরুল হক, তিনি বিক্রি করেন হাজী ইন্তাজদ্দিন ঢালী ও মিয়াজদ্দিন ঢালীর কাছে। তারা জায়গাটি বিক্রি করলে ক্রয়সূত্রে মালিক হন বাবর আলীর পুত্র শেখ আকবর আলী ও তার স্ত্রী তাজুমননেছা বিবি।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সেলিনা পারভীন ওরফে বিউটি একজন মাদক কারবারি। রাঢ়িখাল এলাকায় আসার পর মাদক সেবী ও মাদক কারবারির সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। কুচক্রি মহলের কারসাজিতে সেলিনা পারভীন এখন ওই জমি দখলের পায়তারা করছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার সদর থানায় সেলিনার বিরুদ্ধে মাদক, চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

(জিআর নং-২০৬/১৮, পেনাল কোড-১৮৬০, জিআর নং-২০৩/১৮) জানা যায়, একাধিক পুরুষকে বিবাহ করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়া সেলিনা পারভীনের মূল টার্গেট। সে কখনও সেলিনা পরভীন, কখনও বিউটি, আবার মোছা: সেলিনা বেগমসহ অন্যান্য নামে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ বুঝে কথিত স্বামীদের পরিচয় দিয়ে এলাকা ভিত্তিক সেলিনা মানুষকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে জায়গা জমি দখলের পায়তাঁরাসহ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেন।

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য মরহুম শেখ ফজলুল হক এর সন্তান শেখ মাকসুদুল হক জানান, কিছু দিন আগে আমরা এই জমির নামজারি করাতে গেলে এসি ল্যান্ড অফিস থেকে জানানো হয়, এই জমি ভুল বসত সেলিনা পারভীনের সাবেক শুশুর আকবর আলী নাম আর এস খতিয়ানে উঠে যায় বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই তাই আমরা উক্ত রেকর্ডীও ভুল সংশোধনের জন্য বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ ২য় আদালত, মুন্সীগঞ্জ দেওয়ানী মোকদ্দমা নং-১১৭/২০২২ইং দায়ের করা হয় যা আদালতে বিচারধীন।

তিনি আরোও জানান, আদালত থেকে বার বার নোটিশ জারি করা সত্ত্বেও তারা কোনো বৈধ কাগজপত্র আদালতে পেশ করতে পারেনি। সেলিনা পারভীন তার শ্বশুরের নাম আকবর আলী দাবি করে আমাদের ১শত’ বছরের পৈত্রিক জমিটি দখলের চেষ্টা করছে। আমার দাদার নাম শেখ আকবর আলী ওরফে শেখ একাব্বর । আমরা ঢাকায় বসবাস করি। কিছুদিন আগে ওই জমিতে সেলিনা গং সাইবোর্ড টাঙ্গানোর পাশাপাশি আমার বৃদ্ধ চাচা (বীর মুক্তিযোদ্ধা) বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে তথ্য গোপন করে যেহেতু সে জাহাঙ্গীর আলমের সাবেক স্ত্রী কিন্তু পরিচয় দিয়েছে মৃত জাহাঙ্গীর আলমের বর্তমান স্ত্রী বিষয়টি অতি দুঃখজনক। এই মিথ্যা অভিযোগের ব্যাপরে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্তা করার কারণে তীব্র প্রতিবাদ এবং বিচার দাবি করছি।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সেলিনা পারভীন ওরফে বিউটিকে বাড়িতে গিয়েও তার স্বাক্ষাত পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে কল করা হলে অপর প্রান্ত থেকে অপর একজন ফোন রিসিভ করেন। তিনি জানান সেলিনা পারভীন ফোন রেখে বাজারে গেছেন এই বলে ফোনটি রেখে দেন।

রাঢ়িখাল ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী মো. আমির হোসেন জানান, সেলিনা পারভীন নামে ওই নারী আমার এখানে (অফিস) নামজারি করার জন্য আসে। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জায়গাটি নিয়ে বিরোধ আছে। মামলা চলমান। তার পরেও নামজারির জন্য আমাকে অতিষ্ট করে তুলেছে। উপায় না পেয়ে আমি বলেছি অনলাইনে আবেদন করতে।

শ্রীনগর থানার এসআই মো. মাজহারুল জানান, সেলিনা পারভীন যে অভিযোগটি দায়ের করেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে এর কোন সত্যতা পাইনি। উভয় পক্ষকে শান্তি-শৃঙ্খালা বজায় রাখার জন্য বলেছি। অভিযোগকারী কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তদন্ত চলমান আছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন