ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গত কয়েক বছর ধরে ধান, সবজি ফল ফুলে সমৃদ্ধ হচ্ছে। এখানের কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেশি বিদেশি নতুন নতুন আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ আবাদ করছে জমিতে কেউবা পুকুর পাড়, পতিত জমি, কেউ বা ছাদে আর বাড়ির আঙ্গিনায়। তবে কৃষকের কাছে আবাদের মধ্যে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে টেরি টমেটো, ব্রকলি, লেটোস, ক্যাপসিকাম, ড্রাগন, কারিপাতা, কিউজাই, গৌরমতি, বেনানা ম্যাংঙ্গো, বাড়ি ফুট, আম্রপালী,থাই কাচামিঠা ,মাল্টা, অ্যাভোকেডো, স্ট্রবেরি, কিউই, রাম্বুটান, ল্যাংসাট, ত্বিন, আলুবোখারা, নাশপাতি।
তাছাড়া উচ্চফলনশীল ধান, গম, ভুট্রা তেলজাতীয় উদ্ভিদ, ফুল চাষ পিছিয়ে নেই। মৌসুম অনুযায়ী বছরজুড়ে উচ্চফলনশীল ধান, সবজিসহ ফল ফুল আবাদ করে তারা এক প্রকার নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছে। সেইসাথে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষিতে নতুন নতুন আবাদে বদলে গেছে এখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থাও। কৃষি অফিসের পরামর্শে ওই আবাদ করে অনেকেই সাফল্য অর্জন করে স্বল্প সময়ে এলাকায় বাজিমাত করেছেন।
বর্তমানে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সৌখিন কৃষকরা দেশিয় ফল,সবজি,ধানের পাশাপাশি নানা জাতের বিদেশি ফলের চাষে ঝুঁকছেন। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষি অধিদপ্তরের পর্যাপ্ত পরিচর্যায় ওইসব চাষে তারা ভালো সফলতা পাওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে আবাদের পরিমাণ ও।
স্থানীয় একাধিক কৃষক জানায়, এক সময় এলাকায় কৃষকরা জমিতে শুধু ধান চাষ করতো। কিন্তু বীজসহ প্রযুক্তির কারণে ধান চাষে জমিতে তাদের ফসল উৎপাদন ভালো না হওয়ায় সব সময় লোকসান গুনতে হতো। তবে বর্তমানে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ধান চাষেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মৌসুম অনুযায়ী সারা বছরই আউস, আমন, বোরোসহ উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করছেন কৃষকরা। পাশপাশি নানা প্রকারের সবজি বিদেশী ফলসহ তেলজাতীয় উদ্ভিদ, ফুল চাষাবাদ করে ভালো সাফল্য অর্জন করছেন।
সরেজমিনে উপজেলার তারাগন, আদমপুর, আজমপুর, কৃষ্ণনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কৃষকদের পাশাপাশি সৌখিন লোকজনেরা প্রযুক্তির কল্যাণে তারাস জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান এবং সবজি চাষের পাশপাশি দেশি বিদেশি নানা জাতের ফল চাষ করছেন। ভালো ফলন ফলাতে তারা দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তাছাড়া ওইসব ফলনে স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। পৌর শহরের তারাগন এলাকার ব্যবসায়ী মো. জুয়েল খান বলেন, শখের বসে বাড়ি সংলগ্ন ১.৫ বিঘা জমিতে নুরখান অর্গানিক এগ্রো লিমিটেড নামে দেশী বিদেশী নানা জাতের ফল ও সবজি বাগান গড়ে তুলেন। তার এই বাগানে রয়েছে টেরি টমেটো, ব্রকলি, লেটোস, ক্যাপসিকাম, ড্রাগন, কারিপাতা, কিউজাই,গৌরমতি,বেনানা ম্যাংঙ্গো,বাড়ি ফুট,আম্রপালী,থাই কাচামিঠা ও বারো
মাসি আম। তবে ওই সব চাষে তিনি প্রথম বছর ভালো ফলন পেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ওইসব চারা ঢাকা, রাজশাহী খুলনা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সার্বিক ভাবে সহায়তা করছে বলে জানায়। প্রতিদিন দুর দুরান্তের লোকজনরা তার বাগান দেখতে আসছেন। উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর নোয়ামোড়া গ্রামের (অব:) সেনা সদস্য (ওয়ারেন্ট অফিসার) মো: শাহাদাত হোসেন বলেন ১২ বিঘা জমিতে গত দুই বছর ধরে তিনি মাল্টা, কমলা, কলা, আনার, লেবু, পেয়ারা পেপে লটকন, বাড়ি ফুট, আমরুপালী, কারিপাতা, বল সুন্দরী বড়ইসহ নানা প্রজাতির মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তুলেন।
এবছর এই মিশ্র বাগান থেকে ১৭ লাখ টাকার উপর ফল বিক্রি করেন। কৃষক মোস্তাকিম সরকার বলেন মৌসুম অনুযায়ী বার মাসই টমেটো, শসা, পেঁপে,সাম্মাম, তরমুজ,বরই সহ নানা প্রকার সবজি ও ফল আবাদ করছেন। দেশি বিদেশি ফল ও সবজি চাষ করে বছরে তিনি ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকার উপর তার আয় হচ্ছে বলে জানায়। এক সময় শুধু ধান চাষ করা হতো। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে আর কৃষি অফিসের সার্বিক সহায়তায় কৃষিতে তিনি এই সাফল্য পেয়েছেন। কৃষক আব্দু মিয়া বলেন, এক সময় সনাতন পদ্ধতিতে ধান আবাদ করা হতো। প্রতি বছর বোরো ও আমন মৌসুমে প্রযুক্তির অভাবে ধান চাষ করে লোকসান গুনতে হতো। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কল্যানে উচ্চ ফলণশীল ধান চাষে লাভবান হচ্ছেন। আগে যেখানে প্রতিবিঘা জমিতে ৭-৮ মণ ধান পাওয়া যেতো এখন ২০-২২ মণ পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া ধান চাষের পাশাপাশি একই জমিতে মৌসুম অনুযায়ী নানা জাতের সবজিও আবাদ করছেন। ধান ও সবজি চাষে বছরে তার ৬০ হাজার টাকার উপর আয় হয় বলে জানায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন এ উপজেলার মাটি খুবই উর্বর হওয়ায় বছর জুড়ে এখানে ধান ও সবজির পাশাপাশি দেশি বিদেশি নানা জাতের ফল চাষ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছে। তাছাড়া কৃষিতে উদ্ভাবিত নতুন ফসলের আগমনী বার্তা আমরা দ্রুতই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর হতে কৃষকদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের হাতে কলমে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে কৃষক মাঠ স্কুল, প্রশিক্ষণ ও সরকারের দেওয়া সকল সুযোগ-সুবিধা, প্রণোদনা প্রদান করা
আনন্দবাজার/কআ