নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান আশা করেছিলেন, নতুন বছরে আরও সুনির্দিষ্ট করে জানুয়ারি থেকে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার। তবে প্রথম দিনের ইঙ্গিত একেবারেই ভালো নয়। যে লেনদেন হয়েছে তার মধ্যে ২০টি কোম্পানিতেই হাতবদল হয়েছে সিংহভাগ। টপ টোয়েন্টিতেই লেনদেন হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। বাকি ৩১০টি কোম্পানি মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে কেবল ৫৯ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। কঠিন ২০২২ পার করলেও নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা যে আশা করেছিলেন, বছরের প্রথম দিনই তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
লেনদেন আবার নেমেছে দুই শ কোটি টাকার নিচে। ঢালাও দরপতনে অর্ধেক কোম্পানির দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ নির্ধারণ করার পরেও সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট। গতকাল রবিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কেবল বেড়েছে ১৯টি কোম্পানির দর। কমেছে ১৪৯টি আর ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে ১৬২টি কোম্পানি। ৩৯২টি কোম্পানির মধ্যে নানা কারণে বন্ধ তিনটির লেনদেন। ফলে এদিন ৫৯টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি। সারাদিনে লেনদেন হয়েছে কেবল ১৭৮ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ২০২২ তো বটেওই, ২০২১ সালেও কোনো দিন এত কম লেনদেন হয়নি। এর চেয়ে কম লেনদেন ছিল প্রায় আড়াই বছর আগে ২০২০ সালের ৭ জুলাই। সেদিন হাতবদল হয় ১৩৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণের পর ধস নামার পর ওই বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে পুঁজিবাজারে যে উত্থান, তা চালু থাকে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এরপর পুঁজিবাজার সংশোধনে গেলেও বড় মূলধনি কিছু কোম্পানির দর বাড়তে থাকায় সূচকের উত্থান চলে। সেটি চলে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এরপর থেকে আবার সংশোধন কাটিয়ে ২০২২ সালের শুরুতে পুঁজিবাজার আপন গতিতে ফিরতে শুরু করলেও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব এবং এরপর ফেব্রুয়ারির শেষে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বাজারে দেখা দেয় ধস।
গোটা বছর যায় এভাবেই। এর মধ্যে ২৮ জুলাই ডিএসইসি সাধারণ সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেয়া হয়। এতে সূচকের পতন ঠেকানো গেছে বটে, তবে শেয়ার কেনায় আগ্রহ হারিয়ে বিনিয়োগকারীরা একেবারে সাইডলাইনে বসে। ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর কিছু শেয়ারের অস্বাভাবিক উত্থানে যদিও অক্টোবরের শুরু পর্যন্তে সূচক আর লেনদেন বাড়ছিল, তবে সেই শেয়ারগুলো দর হারানেরা পর বিপুল পরিমাণ টাকা আটকে যাওয়ার কারণে লেনদেন এখন নামে তলানিতে।
প্রতি দিন কোটি কোটি শেয়ার বিক্রির আদেশ থাকলেও থাকে না ক্রেতা। এর মধ্যে ডিসেম্বরের শেষে ১৬৯টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দিয়ে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয় এক শতাংশ। তবে ১০ টাকার নিচের শেয়ারের দরপতন সম্ভব নয়। আবার এই কোম্পানিগুলোর বেশ কিছুর দর ছিল ফ্লোর প্রাইসের অনেক উপরে, যেগুলো প্রায় নিয়মিত লেনদেন হচ্ছিল। কোনোদিন দর বাড়ত, কোনোদিন কমত। নতুন নিয়মে দর বাড়তে পারলেও কমার সুযোগ কম। এ কারণে এই কোম্পানিগুলোর লেনদেনও কমে যায়। এর প্রভাবে লেনদেন নেমে আসে দুই শ কোটির নিচে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম আশা করেছিলেন, নতুন বছরে আরও সুনির্দিষ্ট করে জানুয়ারি থেকে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার। তবে প্রথম দিনের ইঙ্গিত একেবারেই ভালো নয়। যে লেনদেন হয়েছে তার মধ্যে ২০টি কোম্পানিতেই হাতবদল হয়েছে সিংহভাগ। টপ টোয়েন্টিতেই লেনদেন হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। বাকি ৩১০টি কোম্পানি মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে কেবল ৫৯ কোটি ৪২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
একটি মাত্র কোম্পানি দিনের দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁতে পেরেছে। সেটি হলো নতুন তালিকাভুক্ত ইসলামিক কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, যেটি গত ১৮ ডিসেম্বর লেনদেন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে শেষ করছে লেনদেন। ১০ টাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির দর দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৯০ পয়সা। তবে এই দরে শেয়ারের বিক্রেতা নেই বললেই চলে। তারা দিনে লেনদেন হয়েছে কেবল ৬৯৩টি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিটির শেয়ারে যোগ হয়েছে চার শতাংশের কাছাকাছি। বাকি ৯টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি। বাকিগুলোর দর বৃদ্ধির হার একেবারেই নগণ্য। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দর হারানো কোম্পানিটি হলো আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, যেটির শেয়ারের দাম কমেছে ৪.৪৮ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর হারানো ই জেনারেশনের দাম কমেছে ৪.২২ শতাংশ। আরও ছয়টি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১০টির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ১২টির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।
আনন্দবাজার/শহক