ঢাকা | রবিবার
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিরামে বাইক্কা বিল

বিরামে বাইক্কা বিল

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উপজেলায় হাইল হাওরের বড়গাঙিনায় অবস্থিত বাইক্কা বিল দেশের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী আসেন এই বিলে। বিশেষ করে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি শীতকালে এই বিলে অসংখ্য অতিথি পাখি নামে।

তবে গত তিনদিনের টানা ছুটিতে জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। এতে ব্যাপক চাপে পড়তে হয়েছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের। তাছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তবে শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার হিসাবে, গত কয়েকদিনে জেলার পর্যটনখাতে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়েছে।

বিপর্যস্ত হয়ে পড়া পরিবেশ আর প্রতিবেশ সংরক্ষণের জন্য গতকাল মঙ্গলবার থেকে বাইক্কা বিল টানা ৯ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সড়ক মেরামতসহ জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বাইক্কা বিল সকল দর্শনার্থীর জন্য বন্ধ থাকবে।

স্থানীয় সূত্রমতে, সাপ্তাহিক ছুটির দিন গত শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে খ্রিষ্টানদের বড়দিন উপলক্ষে গত রবিবার ছুটি থাকায় সারা দেশের সব পর্যটন এলাকার মতো চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজারেও পর্যটকের ঢল নেমেছিল। বেসরকারি উদ্যোগে এখানে গড়ে ওঠা পাঁচ তারকামানের রিসোর্টসহ শতাধিক হোটেল-রিসোর্টে ছিল পর্যটকের ভিড়।

শ্রীমঙ্গলের সবুজ গালিচা চা-বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হরিণছড়া গলফ মাঠ, পরিযায়ী পাখির বাইক্কা বিল, হাইল হাওর, বধ্যভূমি একাত্তরসহ সব দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকা থেকে পিকনিকে বাস ভাড়া নিয়ে ডে ট্যুরে আসা স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ করপোরেট পর্যটকের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে পুরো জেলা।

হোটেল মালিকেরা জানান, এবারের পুরো শীত মৌসুমেই পর্যটকের আগমন ঘটবে। কারণ এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। রাজধানী ঢাকা থেকে খুব কাছের এবং নিরিবিলি পরিবেশে অবকাশ যাপনের জন্য মৈলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল অতুলনীয়।

এছাড়াও জেলার চা বাগান বেষ্টিত এলাকা শ্রীমঙ্গল, বাইক্কা বিল হাওর, হাকালুকি হাওর, কাউয়াদিঘী হাওর, মাধবকুণ্ড ইকো পার্ক, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাতসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে। এসব পর্যটনকে আকর্ষণীয় করা হলেও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা পাঁচ তারকা মানের হোটেলসহ ৭০টি জেলায় শতাধিক হোটেল রিসোর্ট রয়েছে।

মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় পর্যটকের জন্য লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বর্ষীজোড়া ইকো পার্ক, মুরইছড়া ইকো পার্ক রয়েছে। এর মধ্যে শুধু লাউয়াছড়া উদ্যান থেকে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত ৩ দিনে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৪০৪ টাকা আয় হয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি পর্যটক নারী-পুরুষ, শিশুসহ ছিলেন ২২ জন। দেশি পর্যটক ছয় হাজার ৪১৯ জন ছিলেন। ছোট-বড় যানবাহন ছিল ৩৪৭টি।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সভাপতি সেলিম আহমদ জানান, এই তিন দিনে মৌলভীবাজার জেলায় প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেছেন। শুক্র, শনি ও রোববার সবকটি হোটেল-রিসোর্ট শতভাগ বুকিং ছিল। পর্যটকের থাকা-খাওয়া, পরিবহন, হকারসহ কেনাকাটা সবমিলিয়ে পাঁচ কোটি টাকা আয় হয়েছে। বিশেষ করে পুরো শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পাঁচ তারকা মানের রিসোর্টসহ সবাই ভালো ব্যবসা করেছে। ধারণা ছিল অন্তত ২০ কোটি টাকা আয় হবে। একই দৃশ্য পর্যটকরা বার বার দেখতে চান না। সেজন্য নতুনত্ব সৃষ্টি করা জরুরি।

অভিযোগ রয়েছে, বিপুল পর্যটকের সমাগম ঘটলেও ট্যুরিস্ট পুলিশ ব্যতীত আর কোনো সংস্থার তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। এছাড়া বিভিন্ন চা-বাগানসহ দর্শনীয় স্থানে সরু সড়ক থাকায় দুটি গাড়ি চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। এতে পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। মাধবপুর লেকের রাস্তা এবং শ্রীমঙ্গল ডলুবাড়ি হয়ে নূরজাহান চা-বাগানের সড়কটি প্রশস্ত করার দাবি জানানো হয়।

বিপল সংখ্যক পর্যটকের আগমনের কারণে বাইক্কা বিলের পরিবেশ আর প্রতিবেশগত সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক রাস্তা ভেঙে পড়েছে। জরুরিভিত্তিতে এসব সংস্কার মেরামত আর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। সেজন্যই পর্যটন কেন্দ্র বাইক্কা বিল টানা ৯ দিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন