ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাণিজ্যিক উৎপাদনে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

বাণিজ্যিক উৎপাদনে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র

বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যু কেন্দ্র। পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়ে বহুল আলোচিত-সমালোচিত বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হওয়া শুরু করেছে। গত শনিবার রাত থেকে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে আরও ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান চুক্তির একযুগ পরে হলেও, জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয়রা। তবে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশগত নীতিবাচক প্রভাব নিয়ে শঙ্কিত পরিবেশকর্মী ও সচেতন মহল।

রামপাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুফল রামপাল ও বাগেরহাটবাসী পেতে শুরু করেছে। এই কেন্দ্রের ফলে এলাকার মানুষ নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ পাবে। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি ও বিপুল পরিমান বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান হবে বলে দাবি করেন তিনি।

রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, প্রথম ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে  ৪৬০ মেগাওয়াট গোপালগঞ্জের আমিন বাজার হয়ে ঢাকার জাতীয় গ্রিডে এবং ২০০ মেগাওয়াট খুলনা-বাগেরহাটে সরবরাহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ইউনিটের ৭৯.৩৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াটের কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২৩ সালের জুন মাসে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবার আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান কারিগরি কর্মকর্তা রবীন্দ্র কুমার বলেন, ধীরে ধীরে মেশিনের কার্যক্রম বাড়াচ্ছি, আমাদের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে স্থানীয় বিদ্যুৎতের চাহিদা পূরনের পাশাপাশি জাতীয় বিদ্যুৎতের চাহিদা পূরণে ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাঃ) লিমিটেড-এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক  সাঈদ একরাম উল্লাহ বলেন, আমরা বানিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছি। পরিবেশ গত দিক বিবেচনা করে সবধরণের কারিগরি কাজ করা হয়েছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুই দেশের বন্ধুত্বকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপশি এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।

২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিঃ এর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাঃ) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান শুরু হয়। রমাপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহন শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রায় ৯ বছর বিশলা কর্মযজ্ঞ শেষে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদনে গেল প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে এবছরের ১১ জুলাই বয়লার স্টিম ব্লোয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ আগস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ আগস্ট জাতীয় গ্রীডের সাথে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন