তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সক্ষমতা বাড়াতে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ। এতে শীর্ষ ১০ এশীয় দেশের সারিতে চলে এসেছে। গ্লোবাল এনার্জি মনিটর (জিইএম) এর সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার প্রতিবেদনে জানানো হয় এ তথ্য।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) এর তথ্যমতে, জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কম হয়েছে এলএনজি আমদানি। একইসময়ে, খোলা বাজারের (স্পট মার্কেটের) চালান কেনা কমেছে ২৮ শতাংশ। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো এশিয়ার মূল্য-সংবেদনশীল ক্রেতা দেশগুলো খোলাবাজারের চড়া দাম দেওয়া তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছে। জ্বালানি খাতের পর্যবেক্ষক সংস্থাটি জানায়, বৈশ্বিক গ্যাস সংকটে এলএনজি বাণিজ্য ব্যাহত হলেও, এশিয়াতেই আমদানির জন্য প্রধান প্রধান নতুন টার্মিনাল গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
জরিপমতে, বার্ষিক প্রায় ৪৪২ মিলিয়ন টন (এমপিটিএ) এলএনজি আমদানি সক্ষমতার বিভিন্ন প্রকল্প বর্তমানে এশিয়ায় বাস্তবায়নের নানান পর্যায়ে রয়েছে। যা বিশ্বে নতুন নির্মিত এলএনজি অবকাঠামোর ৬৫ শতাংশ এবং ২০২১ সালে বিশ্বে যে পরিমাণ এলএনজি বাণিজ্য হয়েছে, তাত্ত্বিকভাবে এর পুরোটাই এসব স্থাপনা গ্রহণ করতে পারবে। বাংলাদেশে ১৫.১ এমপিটিএ আমদানি সক্ষমতা নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। অন্যদিকে বাতিল করা হয়েছে ২৬.৩ এমপিটিএ, আর বর্তমানে সচল আছে ৯.৩ এমপিটিএ সক্ষমতার নানান প্রকল্প।
এলএনজি বর্তমানে বেশ দামি এবং এর বিশ্ববাজারও অস্থিতিশীল। তারপরও এটি আমদানির জন্য দরকারি অবকাঠামো নির্মাণে ১১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা– এর ওপর এশীয় দেশগুলোকে আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলবে। আর একইসঙ্গে জলবায়ু সংকট রোধের প্রচেষ্টাকেও ব্যাহত করবে।
জিইএম এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউরোপের দেশগুলো গ্যাসের নতুন জোগান খুঁজতে শুরু করে। এতে বিশ্বব্যাপী বেড়ে যায় এলএনজির দাম। এর উচ্চ দাম ইতোমধ্যেই এশিয়ায় বিভিন্ন দেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এই বাস্তবতায় বলা যায়, এশিয়ার নতুন এলএনজি প্রকল্পগুলো এক জটিল বাজারেরই সম্মুখীন।
আইইএ এর তথ্যমতে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো এশিয়ার মূল্য-সংবেদনশীল ক্রেতা দেশগুলো খোলাবাজারের চড়া দাম দেওয়া তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছে।
এশিয়ায় গ্যাসের ভবিষ্যৎ চাহিদা সম্পর্কেও এক পূর্বাভাসে জানিয়েছে আইইএ এবং রিস্টাড এনার্জি। তাদের প্রতিবেদন মতে, দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে নতুন এলএনজি প্রকল্পগুলো হয় বাতিল, নয়তো কাজ শুরুতে দেরি করা হচ্ছে।
তার ওপর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো উন্নয়নশীল দেশ উচ্চমূল্যের কারণে বাজার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এবং এলএনজি চালান কিনতে না পারায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি উদীয়মান অর্থনীতির এশীয় দেশে গ্যাসের ভবিষ্যৎ চাহিদা কম রাখতে পারে।
গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের রিসার্চ এনালিস্ট রবার্ট রোজানস্কি বলেছেন, গ্যাসের প্রতি অতি-নির্ভরতা তৈরি মানে বিপদ ডেকে আনা। কারণ, এটির টান টান সরবরাহ পরিস্থিতি ও তার ফলে মূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই গ্যাসের বদলে আরও টেকসই, পরিচ্ছন্ন এবং বৈশ্বিক জীবাশ্ম বাজারের প্রভাবমুক্ত উৎসে বিনিয়োগ করাই এশীয় দেশগুলোর জন্য সুবিবেচক হবে। রবার্ট রোজানস্কি বলেন, এলএনজি আমদানির অবকাঠামোয় বিনিয়োগকারীরা এসব স্থাপনা নিম্ন ব্যবহার হারের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন। এতে তাদের সম্পদ অলাভজনক খাতে আটকা পড়বে। কারণ আগামী বেশ কয়েক বছর এলএনজির উচ্চমূল্য বজায় থাকার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার/শহক