শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জ্বালানির অভাবে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ

জ্বালানির অভাবে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হাসপাতালে সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়া কিংবা এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে যেতে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গিয়ে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ, তিনগুণ টাকা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে জ্বালানি তেল বরাদ্দ না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স চালানো যাচ্ছে না। কবে বরাদ্দ পাবে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারলেও তারা আশাবাদি জ্বালানি তেলের বরাদ্দ পেলেই অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

সূত্র অনুযায়ী, ১৯১৭ সালে ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র নিলটুলী মুজিব সড়কের পাশে স্থাপিত হয় ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১শ ২৫। শহরের রোগীরা প্রথম অবস্থায় শহরের মধ্যে অবস্থিত ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও রোগীরা আগে চিকিৎসাসেবা নিতে এখানে আসেন। হাসপাতালটিতে যেসব রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব তাদের এখানে ভর্তি করা হয়। পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত জটিল রোগীদের পাঠানো হয় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ফরিদপুর শহরের বাসিন্দা বিমান দত্ত বলেন, আমার শ্বশুর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স নিতে চাইলে তাকে জানানো হয় তেল সংকটের কারণে সব কিছু ঠিক থাকলেও হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরে তাকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  বিরামপুরে পৌর শহরে পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার বেহাল দশা

মধুখালী উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। সে সুস্থ হয়েছে। তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে জেনারেল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে দুই হাজার টাকা খরচ করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে তাকে বাড়ি নিতে যেতে হচ্ছে। অথচ সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ৭শ থেকে ৮শ টাকার বেশি লাগতো না।

গত শুক্রবার মহান বিজয় দিবসের দিনে দুপুরে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণের পশ্চিম পাশে তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের কাছে চারটি গাড়ি রাখার গ্যারেজ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গ্যারেজে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স দুটি কলাপসিবল গেট টেনে তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স দুটি বন্ধ থাকায় চালক মোতাহার হোসেন (৫১) ও ইমরান হোসেনের (৪২) কোনো কাজ নেই। তবে তারা প্রতিদিনই হাজিরা দেন হাসপাতালে।

শহরের গোয়ালচামট এলাকার বাসিন্দা শফিকুর রহমান বলেন, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সেবা বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সময়মত রোগীকে হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। বাইরের অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হয়। এছাড়া এই সুযোগে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সগুলোও ভাড়া বেশি আদায় করছে।

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার গণেশ কুমার আগারওয়ালা বলেন, তেল বরাদ্দ না পাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে পেট্রল পাম্প থেকে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের তেল নেওয়া হতো, সেই পেট্রল পাম্পে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বকেয়া পড়েছে। ফলে গত ১ নভেম্বর থেকে রোগীদের সেবায় আমরা অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারছি না। এটি দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  অপ্রচলিত বাজারে পোশাকখাত

ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, তেল কম বরাদ্দ পাওয়ায় আমাদের পক্ষে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে। গত অর্থবছরে তেল বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। অথচ চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ৭২ হাজার টাকা। বরাদ্দের টাকা বাড়বে ভেবে আমরা নির্ধারিত পেট্রল পাম্পে বুঝিয়ে এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ টাকার তেল বাকিতে ব্যবহার করেছি। কিন্তু এখনো বরাদ্দ না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে অ্যাম্বুলেন্স বন্ধ রাখতে হয়েছে।

মো. ছিদ্দীকুর রহমান আরও বলেন, এ সংকট সমাধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালককে (অর্থ) দুই দফা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একবারসহ মোট তিনবার লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো সদুত্তর পাইনি। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার এই সেবা চালু করা সম্ভব হবে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন