ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তবাণিজ্যে পূবাল হাওয়া

মুক্তবাণিজ্যে-পূবাল-হাওয়া

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি গ্রাজুয়েশন করবে। এজন্য বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছে। জাপানের সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) অথবা ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (ইপিএ) এর মতো মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করে সহযোগিতা গ্রহণের প্রয়োজন হবে। সেজন্য বাংলাদেশ জাপানের সাথে এ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এমপি বলেছেন, জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য এবং উন্নয়ন সহযোগী। জাপান বিগত ৫০ বছর বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। জাপান এখন বাংলাদেশের বড় রপ্তানি বাজার। দু’দেশের বাণিজ্য দিনদিন বাড়ছে। আর বাংলাদেশে জাপানের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। অতিসম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলায় স্পেশাল ইকোনমিক জোনে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার (একশ কোটি ৫০ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করেছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ জাপানে ১ দশমিক ৩৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। একই সময়ে ২ দশমিক ৪১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।

জাপানের বাজারে এখন এক বিলিয়নের বেশি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে। আগামীতে মুক্তবাণিজ্য সুবিধা পাওয়া গেলে এ রপ্তানি আরও বাড়বে। গতকাল সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অথবা অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) স্বাক্ষরের লক্ষ্যে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা আরম্ভকরণ বিষয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এ অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ জাপানকে পাশে চায়। জাপানের বিদায়ী এ্যাম্বাসেডর ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশের সাথে জাপানের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘ ৫০ বছরের। আরও বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে, এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। জাপান বাংলাদেশের সাথে ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করে বাণিজ্যেক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করতে চায়। বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় জাপান পাশে থাকবে।

জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিনিয়োগ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ১ হাজার ৫৭০ কোটি ইয়েন বিনিয়োগ করেছে। সর্বশেষ বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা।

ফিরে দেখা
বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। স্বাধীন বাংলাদেশে এ সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া অর্গানাইজেশন ফর ইকোনোমিক কো-অপারেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট-ওইসিডি সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শিল্পোন্নত জাপানই সর্বপ্রথম। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানেই মূলত জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক যোগাযোগ প্রসার লাভ করে। ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে শান্তিনগরে জাপানি কনস্যুলার অফিস ছিল পূর্ব পাকিস্তানে জাপানি ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের জন্য নিবেদিত। এ অফিসের উদ্যোগে ঢাকায় ষাটের দশকে জাপানি ফুল সাজানোর উৎসব ‘ইকেবানা’সহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো।

১৯৭২ সালে ১৩-১৪ মার্চে তাকেশি হায়াকাওয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের জাপানি সংসদীয় প্রতিনিধি দল প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী সাতোর নির্দেশে ২৮ মার্চ ১৯৭২ সালে জাপান বাংলাদেশে প্রথম অর্থনৈতিক সার্ভে মিশন পাঠায়। ওই বছর ৬ জুন জাপান-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন এবং কিছুকাল পর জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হলে হায়াকাওয়া তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হন এবং আমৃত্যু এর নেতৃত্বে ছিলেন।

১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে অবর্ণনীয় ক্ষয়ক্ষতির সংবাদে এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগণ তাকেশি হায়াকাওয়ার চিন্তাচেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। জাপানের ডায়েটে প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে হায়াকাওয়া বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি জাপানি জনগণ ও সরকারের সমর্থন সম্প্রসারণের নেপথ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপানে বাংলাদেশ থেকে শীর্ষ পর্যায়ের প্রথম সফরের সময় বাংলাদেশ-জাপান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়, হায়াকাওয়া ছিলেন তার অন্যতম রূপকার। ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর হায়াকাওয়া সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরে এলে রাষ্ট্রাচার উপেক্ষা করে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্যদের নিয়ে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন