ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদেশি গণমাধ্যমে ঝড়

বিদেশি গণমাধ্যমে ঝড়

একাত্তরের নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিকামী বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসে। আত্মসমর্পণ করে পাকবাহিনী। বিশ্বের বুকে নতুন মানচিত্র জন্ম নেয়। যার নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্মের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ নিয়ে বহু ইতিহাস লেখা হয়েছে। বহু গল্পকাহিনি লেখা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আর বিজয়ের ঘটনা বিদেশি গণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রের বুক চিড়ে উঠে আসে এক নতুন দেশ- নাম তার বাংলাদেশ। এই বিজয়ে আকাশে বাতাশে প্রকম্পিত হয়ে উঠে জয় বাংলা স্লোগানে। ঢাকার পতন আর জেনারেল নিয়াজির আত্মসমর্পণের খবর পরের দিন দেশি এবং বিদেশি গণমাধ্যমে স্থান করে নেয়।

মার্কিন দৈনিক‘ দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে’ প্রকাশিত লি লেসকেজের লেখা ১৬ ডিসেম্বরের ডেট লাইনে এরকম একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল ‘পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধ শেষ: উল্লাস আর ফুলেল সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে ভারতীয়দের ঢাকায় প্রবেশ।’ প্রতিবেদনে তিনি লিখেন, হাজার হাজার বাঙালির উল্লাস আর ‘জয়বাংলা’ (ভিক্টরি অব বেঙ্গল) স্লোগানের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সৈন্যরা আজ ঢাকায় প্রবেশ করে। মেজর জেনারেল গন্দর্ব নাগরার অধিনায়কত্বে ভারতীয় সৈন্য ও পূর্ব পাকিস্তানি (বাংলাদেশ) গেরিলাদের মিলিত বাহিনী অতি প্রত্যুষে ঢাকার উপকণ্ঠে একটি সেতুর উপর আঘাতহানে এবং এর প্রেক্ষিতে এখানকার পাকিস্তানি কমান্ড জানায়, তারা আত্মসমর্পণের ভারতীয় চূড়ান্ত শর্ত মেনে নিয়েছে।

‘লন্ডন টাইমস’ ১৬ ডিসেম্বর ডেটলাইনে ‘পাকিস্তানি জেনারেল উদগত কান্না চাপছিলেন’ শিরোনামে সাংবাদিক পিটার ও লাওলিন লেখেন ‘পেছন থেকে গুলির আওয়াজ ভেসে আসছিল। অস্তগামী সূর্যের আলোয় ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পাতা টেবিল ঘিরে দাঁড়িয়েছিল এক দঙ্গল মানুষ। লেফটেন্যেন্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে সই করছিলেন। শত শত বাঙালি জয়বাংলা ধ্বনিতে ফেটে পড়ে। ভারতীয় সৈন্যরা বেস্টনী রচনা করে তাদের দূরে সরিয়ে রাখে। স্বাক্ষর শেষে জেনারেল নিয়াজি উঠে দাঁড়িয়ে যাবার জন্য পা বাড়াতে উল্লাসিত বাংলাদেশের জনগণ চিৎকার করতে থাকে। তিনি উদগত কান্না চাপার চেষ্টা করছিলেনে।

একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর নিউইর্য়ক টাইমসের প্রথম পাতায় মোট ১৪টি সংবাদ ছাপা হয়েছিল। প্রধান খবরটি ছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ সর্ম্পকিত। আট কলমে দুই লাইনে সেই খবরের শিরোনাম ছিল, ‘পূর্বাঞ্চলে আত্ম সমর্পণের পর উভয় ফ্রন্টে যুদ্ধ বিরতিতে ভারতের নির্দেশ।” অন্যদিকে ১৪টি খবরের মধ্যে ৮টি ছিল উপমহাদেশের যুদ্ধ সংক্রান্ত এবং সবগুলিরই ডেটলাইন ১৬ ডিসেম্বর। ঢাকায় আত্মসমর্পণের ওপর রিপোর্ট ছিল দুটি। একটি জেমস পি স্টিরার এবং অপরটি সিডনি এইচ স্যানবার্গের।

সাংবাদিক জেমস পি স্টিরার ‘উল্লাস আর পুস্প উৎসব’ শিরোনামে প্রতিবেদনে লিখেন, পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণের চরমপত্র গ্রহনের পরপরেই আজ (১৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে এবং ‘জয়বাংলা, স্লোগানে উচ্চকিত ভারতীয় সৈন্যরা ট্রাক আর বাসে করে শহরের উত্তর দিক থেকে পাকিস্তানি সামরিক ছাউনিতে প্রবেশ করে।

লন্ডনের ‘দ্য ডেইলি মেইলেও’ প্রায় একই রকম একটি প্রতিবেদন ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা ডেট লাইনে ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি করেন সাংবাদিক ডেনিস নিল্ড। তিনি লিখেন ‘গতকালের (১৬ ডিসেম্বর) দিনটি ঢাকার অধিবাসীদের জন্য মুক্তির দিনে পরিণত হয়। তারা কাঁদে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। ভারতীয় সৈন্যদের দিকে ফুল ছুঁড়ে মারে। হারিয়ে যাওয়া ভাইকে ফিরে পাওয়ার মতো আবেগে তাদের হাত জড়িয়ে ধরে। বৃদ্ধরা রাস্তায় নেমে এসে তরুনদের মতো নাচতে থাকে। সারা শহর স্বাধীনতার স্লোগান জয় বাংলা ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন