ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেলের জমিতে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক

রেলের জমিতে অনুমোদনহীন বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক

রেলওয়ে শহর নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। একই সঙ্গে একাধিক বিল্ডিং তৈরির কাজ চলছে মহাসমারোহে। শহরের প্রধান সড়কে প্রকাশ্যেই করা হচ্ছে এসব নির্মাণ কাজ। কোনো রকম অনুমোদন ছাড়াই এ কর্মযজ্ঞ চললেও নির্বিকার রেলওয়ে প্রশাসনসহ পৌর কর্তৃপক্ষ।

শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কেই চলছে পাঁচটি ভবনের কাজ। এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান নিরিবিলি হোটেল। যা পাকিস্তান আমল থেকেই টিনসেড ছিল। এখন সেখানে করা হচ্ছে ৬তলা বিল্ডিং। প্রায় ১০ শতক জায়গায় এ স্থাপনা করা হচ্ছে।

এর সামান্য দূরেই সড়কের বিপরীত পাশে শমশের কটন হাুউজের পিছনে আরেকটি ৫ তলা ভবন করছে ইউসুফ ব্রাদার্স গং। এটিও টিনসেড থেকে বিল্ডিংয়ে রুপান্তরিত হচ্ছে। এর আয়তনও প্রায় ৮ শতক।

এ সড়কেই সাবেক মুক্তিযোদ্ধা অফিস সংলগ্ন আরেকটি স্থাপনা সংষ্কারের নামে নতুন ভবন নির্মান করা হচ্ছে। এটি করছেন রেলওয়ের সাবেক ঠিকাদার মৃত নয়মুল চৌধুরীর ছেলে রেজওয়ান। এর সামান্য উত্তরে আল আরাফা ব্যাংকের পাশে আরেকটি বিল্ডিং করছে শাওন নামে একজন। প্রায় ৮ শতক জায়গায় করা হচ্ছে ৮ তলা ভবন।

এদিকে শহীদ জহুরুল হক সড়কে বহুতল ভবন করছে ওষুধ ব্যবসায়ী পাপ্পু। এখানে প্রায় ৬ শতক জমির উপর ৫টি দোকান ছিল। গতমাসে ভোররাতে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দোকানগুলো পুড়ে যায়। সেখানে এখন ৬ তলা বিল্ডিং তৈরীর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই জায়গায় থাকা ২টি বিশালাকৃতির গাছ কেটে বিক্রি করেছে। অভিযোগ রয়েছে বিল্ডিং করার জন্যই আগুন লাগার নাটক সাজানো হয়েছে।

এ সড়কে তোফাজ্জল প্রিন্টিং প্রেস সংলগ্ন আরেকটি বহুতল ভবন করা হচ্ছে। এটিও করছে ইউসুফ ব্রাদার্স গং। এখানেও প্রায় ৪ শতক জায়গাজুড়ে চলছে কাজ। সড়কটির উত্তরদিকে কলিম মোড় এলাকায় আরও দুইটি টিনসেড ভেঙে দুইতলা ও তিনতলা ভবন করা হচ্ছে। আবার জামে মসজিদ সংলগ্ন ভবন তৈরীর কাজ করছে সরকার এন্টারপ্রাইজ।

ইতোপূর্বে কলাহাটিতে মৃধা প্লাজা, চাউলহাটিতে দুইটি তিনতলা ভবন, শহীদ ডা. সামসুল হক সড়কে তিনটি ভবন, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে পাবনাইয়া ভবন, মুন্সিপাড়ায় রেলওয়ে কোয়াটার ভেঙে দুইতলা বিল্ডিং করেছে ঠিকাদার সাইফুল। গত তিন থেকে ছয়মাসে এগুলো করা হয়েছে।

এসব বহুতল ভবন নির্মান কাজ চলছে সম্পূর্ণ অনুমোদনহীনভাবে। রেলওয়ে বা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কোন বৈধতা ছাড়াই এই কর্মযজ্ঞ চললেও তারা নির্বিকার। অভিযোগ রয়েছে রেলওয়ে ও পৌর কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে মৌখিক অনুমোদনের নামে কাজ করছে বিল্ডিং নির্মানকারীরা।

রেলওয়ের ও পৌরসভার মধ্যে মামলা চলমান থাকায় কেউই লিখিত অনুমোদন দিচ্ছেনা। তবে কেউ কাজ করলেও বাধাও দেয়া হচ্ছেনা। একারণেই সবাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে। আর টাকা দিলেই স্থানীয় রেলওয়ে বিভাগ নিরব থাকছে। একইভাবে পৌরসভাও নিরবতা পালন করছে। কারণ পৌর কর্তৃপক্ষ চায় ব্যবসায়ীরা উন্নয়ন করুক।

এছাড়াও রেলওয়ে বাজার এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় রেলওয়ের জমিতে করা হচ্ছে একাধিক ভবনসহ বাড়ি তৈরী। যেন হিড়িক পড়েছে অবৈধ স্থাপনা নির্মানের। সেই সাথে কোয়াটার, বাংলো, জায়গা ও তৈরী বাড়ি ঘর দোকান ক্রয় বিক্রয় হাতবদল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসব প্রতিরোধ না করে উল্টো কমিশন নিয়ে অবৈধ অর্থ পকেটস্থ করছে আইওডাব্লু অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। 

সেইসঙ্গে পরিত্যক্ত বা বরাদ্দহীন দেখিয়ে নিজেদের হেফাজতে নেয়া কোয়াটার বহিরাগত ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি বা ভাড়া দেয়া, খালি জায়গা দখল ও বাড়ি-দোকান তৈরীর সুযোগ করে দেয়া, উদ্ধার করা গাছ, ইট, রেললাইন, জানালা-দরজার কাঠ, এঙ্গেল স্টোরে সংরক্ষণ করার পরিবর্তে বাহিরে বিক্রি করে দিচ্ছে তারা।

এব্যাপারে রেলওয়ে ভূসম্পত্তি ও স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষের উপ সহকারী প্রকৌশলী (আইওডাব্লু) শরিফুল ইসলাম বলেন, মূলতঃ রেলওয়ে ২.৭৫ একর জমি যা সৈয়দপুর  পৌরসভার অধীন।  তাই এবিষয়ে আমাদের কিছুই করার নাই। এটি দেখবে রেলওয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। কিন্তু ওই জমি নিয়ে মামলা আদালতে চলমান। সেকারণে সেখানে হস্তক্ষেপ করা যাচ্ছেনা। তিনি এর দায় পৌর কর্তৃপক্ষের বলে জানান।

পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বলেন, রেলওয়ের জায়গায় আমরা কোন বিল্ডিং তৈরীর নকশা পাস বা অনুমোদন দেইনি। তারপরও একাধিক ভবন নির্মান হলে তা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দেখার কথা। কিন্তু তা না করে উল্টো পৌরসভার দোষ দিচ্ছে। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সাবেক মেয়র আকতার হোসেন বাদল স্থাপিত পৌর সবজি বাজার সংষ্কার কাজে বাধা দিয়েছে তারা। এতেই বুঝে নেন প্রকৃতপক্ষে কারা দায়ী

সংবাদটি শেয়ার করুন