২০১৫ সালের পর ভারতের বিপক্ষে আবারো সিরিজ জিতে নিল টাইগার বাহিনী। সিরিজে তামিমের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পান লিটস দাস। আর এ সুযোগ পেয়েই অধিনায়কত্বে ছক্কা হাকালেন লিটন দাস।
সিরিজ জয়ের পর লিটন জানান, ‘খুব খুশি। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম সিরিজে জিততে পেরে ভালো লাগছে। আমরা ভেবেছিলাম এমন পিচে ২৪০-২৫০ একটি ভাল স্কোর হবে। শুরুতে চাপে ছিলাম কিন্তু মাহমুদুল্লাহ ও মিরাজ দুর্দান্ত খেলেছে।
লিটন বলেন, ‘আমি আমার মেইন বোলারদের শেষের দিকে রাখতে চেয়েছিলাম কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে এটা ভালো পিচ ছিল। তাই শুরুর দিকে তাদের দিয়ে খুব একটা বোলিং করাতে পারিনি। পরের ম্যাচেও আমাদের জয়ের জন্যেই ফোকাস থাকবে।’
ভারতকে স্তব্ধ করে বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সিরিজ জিতল টাইগার বাহিনী। মিরপুর শের-ই বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ভারতকে ৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।
টসে জিতে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৭০ রান তোলার আগেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ঘোর বিপদে তখন ত্রাতা হয়ে আসেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই দুজনের ব্যাটে চড়ে বিপর্যয় সামাল দিয়ে পরে দুর্দান্ত স্কোর গড়েছে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে শেষ উইকেট জুটিতে মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জন্ম দিয়েছিলেন রূপকথার। ৫১ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন ১ উইকেটের নাটকীয় জয়।
তবে এবার নিজেকে যেন ছাড়িয়ে গেলেন মিরাজ। চাপের মুখে অসাধারণ ব্যাটিং শৈলিতে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। রিয়াদ তুলে নেন নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম অর্ধ-শতক। দলীয় ২১৭ রানের সময় ব্যক্তিগত ৭৭ রানে আউট হয়ে যান তিনি। উমরান মালিকের বলে ক্যাচ দেন উইকেট কিপার লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে। তাতে ভাঙে রেকর্ড ১৪৮ রানের জুটি।
এর আগে ফতুল্লায় ২০১৪ সালে তৃতীয় উইকেটে এনামুল হক ও মুশফিকুর রহিমের ১৩৩ রান ছিল এত দিন ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। এবার সেটি ছাড়িয়ে গেল মাহমুদউল্লাহ-মিরাজের জুটি।
তবে মাহমুদুল্লাহ ফিরলেও মিরাজকে মিরাজকে আটকাতে পারেনি ভারত। শেষ ওভারে যখন ব্যাট করছিলেন তখন অপরাজিত আছেন ৮৫ রানে। নাসুম ১ বল খেলায় বল ছিল আর ৫টি। সেঞ্চুরি করতে হলে ৫ বলে ১৫ রান তুলতে হতো। কী আশ্চর্য, দারুণ দক্ষতায় সেটিই করে দেখালেন মিরাজ। ৮৩ বলে করলেন ঝকঝকে এক সেঞ্চুরি। শতরানেই অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন মিরাজ। অপর প্রান্তে নাসুম আহমেদও ছোটখাট একটা ক্যামিও খেলেছেন (১১ বলে ১৮)। বাংলাদেশ পেয়ে যায় ২৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর।
দ্বিতীয়ার্ধে ২৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ বলে ৫ রান করে ফেরেন কোহলি। দ্বিতীয় ওভারে এবাদতের পেস বলে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হন কোহলি। ৬ রানের ব্যবধানে শিখর ধাওয়ানকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ১৩ রানে প্রথম দুই উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে ভারত। ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে শ্রেয়াস আয়ার চাপ সামলে নেওয়ার আগেই দশম ওভারে সাকিবের আক্রমণ। ওভারের শেষ বলে সাকিবের করা স্লোয়ার বলটা বুঝতেই পারলেন না ওয়াশিংটন সুন্দর। চেক ড্রাইভ খেলতে গিয়ে তুলে দেন মিডউইকেটে। সহজ ক্যাচ নিয়ে দলের তৃতীয় উইকেট নিশ্চিত করেন অধিনায়ক লিটন দাস।
লোকেশ রাহুলকে নিয়ে পরের উইকেটে জুটি গড়তে গিয়েও মিরাজের আঘাতে সফল হতে পারেননি আয়ার। তবে ভারতকে লড়াইয়ে ঠিকই ফিরিয়েছিলেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে ১০৭ রানের জুটি গড়ে ভারতীয়দের চালকের আসনে নিয়ে আসেন তিনি। তবে, মিরাজের সামনে আবারও পরাস্ত ভারত। ৮২ রান করা আয়ারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে আবার ম্যাচে ফেরান ডানহাতি এ স্পিনার। পরের দুই উইকেট পেতে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ৫৬ বলে ৫৬ রান করা অক্ষর প্যাটেলকে বাউন্সারের ফাঁদে ফেলেন এবাদত। পরের উইকেটটা নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। শার্দুল ঠাকুরকে স্ট্যাম্পিং করে ভারতের সপ্তম উইকেটটা তুলে নেন বাঁহাতি এ স্পিনার।
তবে শেষের দিকে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন আঙুলের চোট নিয়েও ব্যাটে নামা ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ভারতীয় অধিনায়ক বাংলাদেশের নাভিশ্বাস তুলেছেন শেষ দুই ওভারে। ঐ দুই ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৪০ রান। তবুও লড়াইটা শেষ বল পর্যন্ত নিয়ে গেলেন রোহিত। ২৮ বলে তার হার না মানা ৫১ রান গিয়ে থেমেছে দলীয় ২৬৬ রানে। ৫ রানে হারতে হয় ভারতকে। এরই সাথে টানা দুই ম্যাচে জয়ে অন্যতম ভূমিকা রেখে নতুন ইতিহাস গড়েন মিরাজ।
এদিকে আঙুলে চোটের কারণে শেষ ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
আনন্দবাজার/কআ