জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেছেন, পৃথিবীর অনেক দেশ গ্রিন ট্রানজিশন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে ইউরোপ এবং সারাবিশ্বে গোটা পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়ে গেছে। আমাদের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী একটি হোটেলে ‘ইনভেস্টিং ইন গ্রিন এনার্জি ট্রানমিশন: পার্টনারশিপ অপরচুনিটিস ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড ইউরোপ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এমন বক্তব্য দেন ইইউ রাষ্ট্রদূত।
বাংলাদেশের গ্রিন ট্রানজেশনে ইউরোপ সহায়তা দেবে জানিয়ে চার্লস হোয়াইটলি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে বিনিয়োগ। কারিগরি সহায়তা সক্ষমতা বৃদ্ধি। প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন জিনিস। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বর্তমানে ইউরোপ থেকে ১৩০ কোটি ইউরো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণের মাধ্যমে এগুলো দেওয়া হয়েছে।
ওই সেমিনারে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুসহ অন্যরা। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ‘ট্রানজিশন’ শব্দটির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে উন্নিত হওয়া। ইউরোপ দীর্ঘদিন ধরে উন্নতির একটি পর্যায়ে রয়েছে এবং তারা এখন অন্য একটি স্তরে উন্নীত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীলে দেশ এবং আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এখানে জ্বালানির ক্ষেত্রে বিবর্তন হতে পারে, কিন্তু ট্রানজিশন নয়।
উপদেষ্টার কথা স্পষ্ট হয় যে, জ্বালানি ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ধারণার সঙ্গে একমত নয় বাংলাদেশ। ইইউ যেভাবে এই খাতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিতে চায়, সেটির বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে সরকারের।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, সবার কাছে সুলভে, নিরবিচ্ছিন্নভাবে এবং মানসম্মত জ্বালানি সেবা পৌঁছে দেওয়া সরকারের উদ্দেশ্য। আমরা আমাদের কৌশল নির্ধারণ করছি আমাদের উন্নয়নের জন্য। আমাদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক দায়িত্বের মধ্যে থেকে আমরা এই উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করছি।
তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমি নবায়নযোগ্য জ্বালানি শব্দটা ব্যবহার করতে চাই না বা সবুজ জ্বালানি শব্দটিও ব্যবহার করতে চাই না। আমি যে ধারণাটি ব্যবহার করতে চাই, সেটি হচ্ছে পরিচ্ছন্ন শক্তি। এর অর্থ হচ্ছে গ্রিন হাউজ গ্যাস যে পরিমাণ দূষণ করে থাকে পরিচ্ছন্ন শক্তি সেটি করে না। বাংলাদেশের মাথাপিছু বার্ষিক দূষণের পরিমাণ এক টনেরও কম। অন্যদিকে ইউরোপের ক্ষেত্রে এটি সাত থেকে ১৫ টন জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ইউরোপ দুই লাখ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কয়লা থাকে। আমাদের দিকে যদি তাকাই আমাদের গোটা সিস্টেম ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কয়লা থেকে।’
পরিবেশ দূষণের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয় জানিয়ে তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরী বলেন, ‘সম্প্রতি মিশরে কপ ২৭ এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে ক্ষতি হয়েছে সেটির ক্ষতিপূরণ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে দেবেন। এই তহবিল পাওয়া গেলে সেটি আমাদের সিস্টেমের জন্য একটি প্রণোদনা হবে।’
পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প একটি পরিচ্ছন্ন শক্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, যদি আমরা এর জীবন-চক্র দেশি সৌর বিদ্যুতের থেকে কম দূষণ করে থাকে পারমাণবিক শক্তি।’ জীবাশ্ম জ্বালানিকে পরিচ্ছন্ন শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসবে। আমরা ইতিমধ্যে দশটি কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল করেছি এবং সৌরভিত্তিক নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার জন্য আমরা একটি নীতি তৈরি করেছি। এর ফলে ব্যবসায়ীরা এখাতে বেশি অবদান রাখছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন এবং এই জন্য সরকার। বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ সুযোগ এর সম্ভাবনা যাচাই করে দেখছে। আমি আশা করি নবাযনযোগ্য জ্বালানি নিয়ে টিম ইউরোপের যে উদ্যোগ রয়েছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য ফলপ্রসূ হবে। বাংলাদেশ তার কৌশল বাস্তবায়নের জন্য ইউরোপের সঙ্গে কাজ করবে।
আনন্দবাজার/শহক