ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বয়স মানেনা ক্ষুধা ছোট হাতে বড় দায়িত্ব

বয়স মানেনা ক্ষুধা ছোট হাতে বড় দায়িত্ব
  • সংসারের হাল ধরতে অটোরিকশা চালান শিশু জাহাঙ্গীর

নাম মো. জাহাঙ্গীর আলম (১২)। তার চোখ মুখে যেন কষ্টের ছাপ লেগে আছে। মলিন মুখখানি দেখলে সবার যেন  মায়া লাগে। যে বয়সে স্কুলে লেখাপড়াসহ অন্যছেলেদের সঙ্গে হেসে-খেলে আনন্দ উল্লাসে বেড়ে উঠার কথা সে বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে নিয়েছে। প্রতিদিন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। সে এখন মা ছোট ভাই বোনদের বিশাল বোঝা কাঁধে নিয়ে ছোট হাতে সংসারের এক বড় দায়িত্ব পালন করছে।

জাহাঙ্গীর উপজেলার কসবা এলাকার আলমগীর হোসেনের ছেলে। বর্তমানে সে আখাউড়া পৌর শহরের রাধানগর এলাকায় বসবাস করছেন। পৌর শহরের সড়ক বাজার এলাকায় কথা হয় অটোচালক শিশু জাহাঙ্গীরের সঙ্গে। জাহাঙ্গীর বলেন, তার পরিবারে মা, দুই ভাই, একবোন রয়েছে। ভাই-বোনের মধ্যে সে সবার বড়। গত ৩ বছর আগে তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যস্থানে চলে যায়। এরপর থেকে তাদের কোনো খোঁজ খবর রাখে না। একদিকে মা অসুস্থ অন্যদিকে  বাবা অন্যত্র চলে যাওয়ায় অনাহারে অর্ধাহারে চলতে হয়েছে তাদের। কোনো উপায় না পেয়ে এক পর্যায়ে মা ও ছোট ভাই বোনকে নিয়ে তারা আখাউড়ায় চলে আসে। গত ৫ মাস ধরে আখাউড়ায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত বিরামহীনভাবে রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে যা উপার্জন করা হয় তা দিয়েই চলছে তার পরিবার।

জাহাঙ্গীর জানায়, প্রতি সপ্তাহে তার মায়ের এক হাজার টাকার ওষুধ লাগে। সে ছাড়া সংসারে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। তাই সে রিকশা চালাই। প্রথম প্রথম লোকজন তার রিকশায় উঠতে চাইতো না। এখন আর এ সমস্যা হয় না।  সকাল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত রিকশা চালিয়ে মালিকের ভাড়া দিয়ে দৈনিক ৪শ থেকে ৫শ টাকার উপর আয় হয়। সারাদিনের আয়ের টাকা সন্ধ্যায় তার মায়ের হাতে তুলে দেন। সে টাকায় তার মা চাল, ডাল, সবজিসহ অন্যান্য জিনিস ক্রয় করেন। তবে যে দিন রিকশা নিয়ে বের হতে না পারি সে দিন খুবই কষ্টে যায়।  জাহাঙ্গীর আরো বলেন,  তার বয়সের ছেলেরা যখন খেলাধূলা করে তখন খুবই  ইচ্ছে করে তাদের সঙ্গে খেলতে। হইহুল্লোড় করতে। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে খেলাধুলা করে সময় কাটাতে। তবে, দিনশেষে বাড়িতে খাবার নিয়ে ফিরতে হবে, এ ভাবনাও থাকে তার। তাই পরিবারের কথা চিন্তা করে রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে তাকে রাস্তায় নামতে হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন