- আরও দুই মাস সময় চায় ৬৭ কর সমিতি
- এনবিআর চেয়ারম্যান-আয়কর বিভাগে ২০ নভেম্বর আবেদন জমা
অর্থনৈতিক মন্দা ছাড়াও চলতি অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রচারণাতেও রয়েছে ব্যাপক ঘাটতি। যে কারণে ই-টিআইএনধারী ৮০ লাখের বেশি হলেও রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা অনেক কম। সে কারণে করদাতাদের রিটার্ন দাখিল করার সুযোগ দেওয়ার জন্য দুই মাস সময় বাড়ানোর জন্য দেশের ৬৭টি কর আইনজীবী সমিতির পক্ষে আবেদন করা হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর এনবিআর চেয়ারম্যান ও আয়কর বিভাগের সদস্য বরাবর আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।
সমিতিগুলোর আবেদনে উল্লেখিত তথ্যমতে, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ও ফার্মগুলোর ক্ষেত্রে ২০২২-২০২৩ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময় আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু ২০২২-২০২৩ করবর্ষের পরিপত্র বিলম্বে পাওয়ায়, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সব পেশার করদাতাদের পক্ষে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না।
এমতাবস্থায় সারাদেশের ৬৭টি আয়কর আইনজীবী সমিতি থেকে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় দুই মাস বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সংগঠন “বাংলাদেশ ট্যাক্স ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন” এর কাছে জোর দাবি জানিয়েছে। এছাড়া বর্তমান সরকারের নেওয়া নীতিমালা অনুসরণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও সর্বোপরি করদাতাদের সুবিধার্থে জরিমানা ছাড়া চলতি করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের ও ফার্মগুলোর ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের পর আরো দুই মাস বাড়ানো প্রয়োজন।
সমিতিগুলোর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে আইনজীবীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ ট্যাক্স ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ২০২২-২০২৩ করবর্ষের পরিপত্র বিলম্বে পাওয়ায় ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় দুই মাস বাড়ানো দরকার।
ট্যাক্স ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদ আলম বলেছেন, অনেক করদাতা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারেননি। এর ওপর এবার আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। অ্যাডভোকেট মো. খোরশেদ বলেন, শুধু আমরা নই, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনও সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে বলে জেনেছি।
ট্যাক্স ল ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মনে করছেন, চলতি করবর্ষের পরিপত্র বিলম্বে পাওয়ায় ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কথা চিন্তা করে করাদাতাদের আরও সুযোগ দেওয়া উচিত। তিনি বলেন, আমাদের এ দাবিসহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে শিগগিরই এনবিআর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ করবো। আশা করছি করদাতাদের দাবি মেনে নেবে এনবিআর।
প্রসঙ্গত, আগের বছরে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তবে পরে সেই সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। এনবিআরের জনসংযোগ দপ্তর বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছিল। যেখানে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ায় রাজস্ব বোর্ড। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ৩১ ডিসেম্বর সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় করবর্ষের জন্য ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২২। জরিমানা পরিহারের লক্ষ্যে ২ জানুয়ারির মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে বলা হয় তখন।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছিল, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট অসুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে করবর্ষের আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা ৩০ নভেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। এর আগে চট্টগ্রাম চেম্বারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজন বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময় বাড়ানোর দাবি জানায়।
এনবিআর সূত্রমতে, গেল করবর্ষের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ লাখ ৫৫ হাজার করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা হয়। আগের করবর্ষের একই সময়ে যেখানে রিটার্ন জমাদানের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪৮ হাজার। আগের বছরের তুলনায় গত বছরে ৬ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পায়।