দেশে ৭০টির বেশি শিল্প-কারখানা স্থাপন
- চাহিদা মিটিয়ে সিরামিক, টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যারের পণ্য বিদেশে রপ্তানি
রাজধানীর বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে হয়ে গেল সিরামিক এক্সপো-২০২২। এক্সপোতে একটি প্যাভিলিয়ন নিয়ে অংশ নিয়েছে বিএইচএল গ্রুপ। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই এক্সপো শেষ হয় গতকাল শনিবার। এক্সপোতে বিএইচএল গ্রুপ তাদের তিনটি সিরামিক ব্র্যান্ড (বিএইচএল সিরামিক, কুংফু সিরামিক ও ভিঞ্চি সিরামিক) ও একটি স্যানিটারি ওয়্যার ব্র্যান্ড পারলা স্যানিটারি ওয়্যার নিয়ে ১ নম্বর হলে ১০৫ নম্বর প্যাভিলিয়নে প্রদর্শনী করছে।
মেলা প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, দেশে ইতোমধ্যে সিরামিক, টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারি ওয়্যারের ৭০টিরও বেশি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় বাজারে বিক্রয়ের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। গত দশ বছরে সিরামিক খাতে উৎপাদন বেড়েছে ২০০ শতাংশ। বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। বিশ্বের ৫০টিরও বেশি দেশে সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে বছরে আয় পাঁচশ কোটি টাকা। এই খাতে রপ্তানি আয় বাড়ছে। বিনিয়োগ বাড়ছে।
১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে এ শিল্পে জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পাঁচ লাখ মানুষ এ খাতটির সঙ্গে জড়িত। এসময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, উন্নত গুণগতমান ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশে তৈরি সিরামিক পণ্যের কদর বাড়ছে। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে নতুন নতুন বাজারও সৃষ্টি হচ্ছে।
সিরামিক এক্সপো বাংলাদেশ ২০২২ দেশের তৃতীয় ও সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী মন্তব্যে করে ইরফান উদ্দিন বলেন, প্রস্তুতকারক, রপ্তানিকারক এবং সরবরাহকারীরা তাদের নতুন পণ্য, আধুনিক প্রযুক্তি এবং নিজেদের দক্ষতা বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে এ এক্সপোতে। এক্সপোর মাধ্যমে দেশীয় সিরামিক পণ্য বাজারজাতকরণের পাশাপাশি ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে থাকবে স্পট অর্ডারের সুযোগ।
এদিকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সম্পূর্ণ উৎপাদনমুখী শিল্প হওয়ার দিকে এগোচ্ছে দেশের সিরামিক শিল্প। ওয়ার্ল্ড ক্লাস রেঞ্জের নতুন নতুন টাইলস, স্যানিটারি আর টেবিল ওয়্যারের নান্দনিক প্রদর্শনী চলছে সিরামিক এক্সপোর প্রতিটি প্যাভিলিয়নে। একই ছাদের নিচে সিরামিক পণ্যের বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানতে পারছেন মেলায় আগতরা। অংশগ্রহণকারীরা উন্নত গুণগত মান ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে বিশ্ববাজারে যেমন দেশে তৈরি সিরামিক পণ্যের কদর বাড়ছে তেমনি দেশীয় বাজারেও বাড়ছেও চাহিদা।
তিন দিনব্যাপী এই মেলায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৫টি দেশের ১০ প্রতিষ্ঠানের ২০০টি ব্র্যান্ড অংশ নিয়েছে। ২৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এছাড়া ৭ ডিসেম্বর রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
করপোরেটদের অংশগ্রহণ বাড়ছে
সিরামিক টেবিলওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার এবং টাইলসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃহৎ সংস্থাগুলিকে বাজার প্রবেশে উৎসাহিত করেছে; প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত ছয় বছরে সিরামিক বাজারে শেলটেক, ডিবিএল এবং গ্রেটওয়াল সিরামিকের মতো পাঁচটি বড় কোম্পানি অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা কোটি টাকা বিনিয়োগ করে– এতে মোট বাজার বিনিয়োগ ১০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত ছয় বছরে ১০০ শতাংশ প্রসারিত সিরামিক বাজার নিয়ে উদ্দীপ্ত প্রাণ-আরএফএল। কোম্পানিটি প্রাথমিকভাবে টাইলস তৈরি করবে বলে বাজার সূত্রে জানা গেছে।
সিরামিক টেবিলওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার এবং টাইলসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃহৎ সংস্থাগুলিকে বাজারে প্রবেশে উৎসাহিত করেছে; প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। দ্রুত নগরায়ণ, বৈচিত্র্যময় আবাসন এবং জনগণের খরচযোগ্য আয় বৃদ্ধি: এসব কারণে ২০ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির সাথে দেশের সিরামিক বাজার ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশিতে উন্নীত হয়েছে।
নিত্যপণ্য প্রস্তুতকারক মেঘনা গ্রুপ, এক সময়ের তামাক শিল্পের জায়ান্ট আকিজ গ্রুপ এবং কৃষি-ব্যবসা ও প্লাস্টিক প্রস্তুতকারক প্রাণ-আরএফএল সবাই এখাতে উৎসাহী। প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ নিয়ে সম্প্রতি টাইলস বাজারে প্রবেশ করেছে মেঘনা গ্রুপ। আর আকিজ গত মাসে টাইলস তৈরিতে উজ্জ্বল রেকর্ড করার পর- টেবিলওয়্যারে উৎপাদন প্রসারিত করেছে।
বিসিএমইএ সভাপতি সিরাজুল মোল্লা বলেন, ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে বড় বড় কোম্পানিগুলো সিরামিক বাজারে আসছে। স্থানীয় বাজার এখন বেশ প্রতিযোগিতামূলক। আমাদের দেশে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। একসময় সিরামিক টাইলসের ব্যবহার দেখা যেত নগরকেন্দ্রিক বাসাবাড়িতে। এখন গ্রামেগঞ্জে- প্রান্তিক পর্যায়েও টাইলসের ব্যবহার হচ্ছে। এক কথায়, টাইলস এখন একটি অপরিহার্য পণ্যে পরিণত হয়েছে।