- ১৮ দিনে এলো ১.০৬ বিলিয়ন ডলার
- মাস শেষে ছড়াবে ১.৭৬ বিলিয়ন ডলার
বৈধপথে প্রবাসী আয় ধারাবাহিক কমছে। অর্থনীতির অন্যতম এ সূচকটির নেতিবাচক গতি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে বৈধপথে রেমিট্যান্স আনতে বিভিন্ন শর্ত শিথিল, চার্জ ফি মওকুফসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু তারপরও ইতিবাচক সাড়া মিলছে না।
গতকাল রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ১৮ দিনে ১০৫ কোটি ৯৯ লাখ (১.০৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৮ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে প্রবাসী আয়ের পরিমাণ ১৭৬ কোটি ডলার ছাড়াবে। ।
নভেম্বরের প্রথম ১৮ দিনে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাঁচ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ১৮ কোটি ৮২ লাখ মার্কিন ডলার। বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৪ কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলার। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার, আর বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে দুই কোটি ৩৯ লাখ মার্কিন ডলার।
চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলার এসেছে। এরপর অগ্রণী ব্যাংকে এসেছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ, ডাচ্–বাংলা ব্যাংকে এসেছে ৬ কোটি ৬৪ লাখ, সোনালী ব্যাংকে এসেছে ৬ কোটি ৪২ লাখ এবং আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকে এসেছে ৫ কোটি ডলার প্রবাসী আয়। আলোচিত সময়ে সরকারি বিডিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, বিদেশি হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে কোনোন রেমিট্যান্স আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৈধ পথে এ পর্যন্ত দেশের বাইরে গেছেন ১ কোটি ৪৫ লাখ কর্মী। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন প্রায় ৩৬ শতাংশ। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লাখ ৭৫ হাজার কর্মী বাইরে গেছেন। এর মধ্যে ৫ লাখ ১৪ হাজার বা ৫৯ শতাংশই গেছেন সৌদি আরবে। গত বছর ৬ লাখ ১৭ হাজার শ্রমিক যান সে দেশে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২ লাখ ১৮ হাজার। শ্রমিক যাওয়া বাড়লেও দেশটি থেকে মোট রেমিট্যান্সে অংশ কমছে। করোনার বছর ২০২০ সালে মোট ২ হাজার ১৭৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের ২৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ আসে সৌদি আরব থেকে। পরের বছর সেখান থেকে মোট রেমিট্যান্সের ২৩ দশমিক ১৭ শতাংশ আসে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অংশ আরও কমে ১৯ শতাংশের নিচে নেমেছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মী যাচ্ছে ওমানে। চলতি বছর মোট শ্রমিকের ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ গেছে দেশটিতে। আগের বছর প্রায় ৯ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ছিল ১০ শতাংশের মতো। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের ১২ শতাংশের মতো থাকেন ওমানে। অথচ মোট রেমিট্যান্সে ধারাবাহিকভাবে অংশ কমে ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশে নেমেছে। করোনার মধ্যে ২০২০ সালে যেখানে মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৭ শতাংশ এসেছিল সে দেশ থেকে। গত বছর এসেছিল ৫ শতাংশের মতো।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমলেও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাড়ে ৭ শতাংশ থাকেন মালয়েশিয়ায়। অথচ সে দেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্সের অংশ কমে ৫ শতাংশে নেমেছে। ২০২০ সালে মোট রেমিট্যান্সের ৮ শতাংশ এসেছিল দেশটি থেকে। গত বছর এসেছিল ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। চলতি বছর মোট শ্রমিকের সাড়ে ৫ শতাংশ গেছে সিঙ্গাপুরে। সব মিলিয়ে মোট প্রবাসীর ৬ শতাংশ থাকেন সিঙ্গাপুরে। অথচ রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় নেই সিঙ্গাপুর। অথচ চলতি বছরের ৯ মাসে মাত্র ২৭ কোটি ডলার এসেছে সে দেশ থেকে। গত বছর এসেছিল ৩৮ কোটি ডলার। আগের বছর যা ছিল ৫৭ কোটি ডলার। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে করোনার বছর মোট রেমিট্যান্সের ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ এসেছিল। অথচ গত বছর তা কমে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশে নামে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সামান্য বেড়ে ৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ হয়েছে।
রেমিট্যান্স আহরণের দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে চলতি বছরের ৯ মাসে ২৭৫ কোটি ডলার বা প্রায় ১৭ শতাংশ রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছর যা ১৬ শতাংশ ছিল। আর করোনার মধ্যে এসেছিল ১৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য থেকে ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ রেমিট্যান্স এসেছে। গত বছর ছিল ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং তার আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। মূলত এসব দেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বেশি।