ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খেলাপির বড় ঝুঁকিতে পাকিস্তান

খেলাপির বড় ঝুঁকিতে পাকিস্তান
  • বিদেশি ঋণে জর্জরিত দেশ
  • বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রাজনৈতিক সংকট

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও চলমান রাজনৈতিক সংকটে দিশেহারা পাকিস্তান। তার উপর আবার ঋণের বোঝা! বিদেশি ঋণে জর্জরিত দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা এখন নজিরবিহীন সংকটের মধ্যে। আগে থেকেই ছিল ভয়াবহ মূল্যস্ফীতি এবং সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যও যেন আকাশছোঁয়া। মূলত সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চলে আসা অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়েছে পাকিস্তানের। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পাকিস্তানে রাতারাতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে পাঁচ বছরের ক্রেডিট ডিফল্ট সোয়াপস (সিডিএস)। মূলত এই বীমা চুক্তি খেলাপি হওয়ার বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারীকে রক্ষা করে এবং এটি বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।

দ্য ডন বলছে, গবেষণা সংস্থা আরিফ হাবিব লিমিটেডের দেওয়া তথ্য অনুসারে, বুধবার ক্রেডিট ডিফল্ট সোয়াপস বা সিডিএস বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশে। যা এক দিন আগেই ছিল ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ। ওয়াশিংটনের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, গত সপ্তাহে পাকিস্তান এবং আইএমএফের মধ্যে আলোচনার সময়সূচী পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে, তবে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। মিডিয়া রিপোর্টে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, নভেম্বরের শুরুতে যে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল তা চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

এসব প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর বিক্রয় কর সামঞ্জস্যের প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং চলতি বছরের শুরুতে পুনরুজ্জীবিত করা ঋণ চুক্তির অধীনে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের পরই আবার আলোচনা শুরু হবে। তবে ডনের সঙ্গে কথা বলা একাধিক সরকারি সূত্র বলছে, গত মাসে পাকিস্তানে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর আইএমএফের সঙ্গে এই আলোচনাটি পুনঃনির্ধারণ করা হয়।

দ্য ডন বলছে, পাঁচ বছরের সুকুক বা ইসলামিক বন্ডের ম্যাচ্যুরিটির বিপরীতে আগামী ৫ ডিসেম্বর ১০০ কোটি মার্কিন ডলার পরিশোধ করার কথা রয়েছে পাকিস্তানের। যদিও পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী বারবারই সুকুক পেমেন্টের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার তার এই আশ্বাসের ওপর নির্ভর করতে চাইছে না। কারণ বাজার, দাতা, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর কাছ থেকে আরও বেশি ঋণ নিয়ে খেলাপি বা দেউলিয়া হওয়া এড়াতে লড়াই করছে পাকিস্তানের অর্থনীতি।

এছাড়া দিনের পর দিন সিডিএস-এর বৃদ্ধি মূলত পাকিস্তানের গুরুতর পরিস্থিতিকেই প্রতিফলিত করে। মূলত সিডিএস-এর বৃদ্ধি সরকারের জন্য বন্ড বা বাণিজ্যিক ঋণের মাধ্যমে বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করা ক্রমবর্ধমান ভাবে কঠিন করে তোলে। দ্য ডন বলছে, পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা মেটাতে চলতি অর্থবছরে শেহবাজ সরকারের ৩ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার প্রয়োজন। অন্যদিকে আর্থিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাকি অর্থবছরে এখনও প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন পাকিস্তানের।

অবশ্য পাকিস্তান এখনও আইএমএফ-এর কর্মসূচিতে রয়েছে। এর ফলে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে অর্থপ্রবাহ পেতে সক্ষম হবে পাকিস্তান। এছাড়া পাকিস্তান চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব ঘাটতি কমিয়ে আনতে আইএমএফকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অর্থ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ঘাটতি আরও বেড়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। পাকিস্তানের আর্থিক খাত বলেছে, আর্থিক তারল্য বাড়াতে এবং রাজস্ব ঘাটতির সম্প্রসারণ এড়াতে নতুন কর আরোপের দাবি করছে আইএমএফ।

দ্য ডন বলছে, পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফের সরকারের এখন কমপক্ষে ৮০ হাজার কোটি রুপির প্রয়োজন, যা কেবলমাত্র নতুন কর আরোপের মাধ্যমেই সম্ভব। তবে পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে শেহবাজ সরকারের জন্য নতুন করে কর আরোপ কঠিন হতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন