ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবি

চীনের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প প্রত্যাহারের দাবি

চীন বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে একের পর এক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। চায়না কোম্পানীগুলো বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ধীরগতি, দুর্নীতি, অনিয়ম ও শ্রমিক নির্যাতন করছে।

বারবার প্রকল্পের মেয়াদ ও আর্থিক ব্যয় বাড়িয়ে তারা জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। চীন তিস্তা প্রকল্পের নামে ঋণের জালে ফেলে এবার বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা বানানোর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। চীন আবার উত্তরবঙ্গের মানুষের রক্ত চুষে খাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে উল্লেখ করেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় রাজধানী ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আয়োজিত চীনের আগ্রাসন বন্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল, বিশিষ্ট ভাস্কর্য শিল্পী রাশা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ্যাড. এইউজেড প্রিন্স প্রমুখ।

আমিনুল ইসলাম আরো বলেন, ১২ নভেম্বর পূর্ব তুর্কিস্তান স্বাধীনতা দিবস। উইঘুরদের ৮৯তম স্বাধীনতা দিবস। চীন উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস ও জনগণকে জিম্মি করে নিজেদের অসৎ এজেণ্ডা বাস্তবায়নের ষড়যন্ত্র করছে। তিস্তা নদীর আশেপাশে অঘোষিত সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা হচ্ছে। অবিলম্বে চীনের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে এডিবি, জাইকা, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি ১২ নভেম্বর পূর্ব তুর্কিস্তানের স্বাধীনতা দিবসকে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি। ১৯৩৩ সালে স্বল্প সময়ের জন্য পূর্ব তুর্কিস্তান নামে স্বাধীন দেশ পেয়েছিল উইঘুররা। পরে তা চীন দখল করে নিয়ে স্বাধীনতাকামী উইঘুরদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন শুরু করে যা এখনো চলছে। জাতিসংঘের দাবি অনুযায়ী, চীনের বন্দিশালায় বর্তমানে নারীসহ ১০ লাখ উইঘুর মুসলমান আটক আছেন।

এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী অপশক্তি চীন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে জড়িত ছিল। বিএনপি-জামাতের শাসনামলে ১৫ আগস্টে খালেদা জিয়াকে জন্মদিন উপহার পাঠানো রাষ্ট্র চীন। ঢাকা টু কুড়িগ্রাম ছয় লেনের মহাসড়ক প্রকল্পে চীনা কোম্পানির ধীরগতি কৌশলের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে চীনা কোম্পানি কর্তৃক শ্রমিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার করতে হবে।

রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশ সকল শ্রেণির মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

জহির উদ্দিন জালাল বলেন, “বাংলাদেশে কর্মরত চীনা কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত শ্রমিক নির্যাতন, বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। চীন কখনো বাংলাদেশের বন্ধু ছিল না, কখনোও বন্ধু হবেও না।

এ্যাড. এইউজেড প্রিন্স বলেন, চীন সরকার সংখ্যালঘু মুসলিমদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতায় প্রতিনিয়ত নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।এশিয়া সিআইএর ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্ট বুক অনুযায়ী চীনের মোট জনসংখ্যার ১ থেকে ২ শতাংশ মুসলিম। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিবেদনে দেখা যায়, মুসলিমরা চীনা জনসংখ্যার ১ দশমিক ৫ শতাংশ। জিনজিয়াং প্রদেশের জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখের মতো। এর মধ্যে মুসলমান প্রায় ১ কোটি ২৬ লাখ। প্রায় ৫৮ শতাংশ মুসলিম। ফ্রিডম ওয়াচের মতে, চীন হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম ধর্মীয় নিপীড়ক দেশ। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা না থাকায় এসব নিপীড়নের গোঙানির শব্দ বিশ্ববাসী খুব একটা জানতে পারে না।

আনন্দবাজার/কআ

সংবাদটি শেয়ার করুন