ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্তিত্ব সংকটে তাঁতশিল্প

অস্তিত্ব সংকটে তাঁতশিল্প
  • প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৫০০ তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে তাঁত বন্ধ করেছেন। এমনকি পেশা বদল করে আজ অন্য পেশায় চলে গেছে। অনেকে আবার বাপ-দাদার এই পেশাকে প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও স্মৃতি হিসেবে আঁকড়ে ধরে আছে। এক সময় বিরামহীনভাবে কাজ করে যেতেন তাঁতিরা। কিন্তু তাঁত শিল্পের এখন আর সেই সুদিন নেই।

তাঁতের খট খট শব্দে এক সময় মুখরিত থাকত তাঁতপল্লিগুলো। কিন্তু দফায় দফায় তাঁত কাপড়ের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছে না প্রান্তিক তাঁতিরা। একের পর এক তাঁত বন্ধ হয়ে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রাজবাড়ি, মহিষামুড়ী ও বাণীনগর গ্রামগুলো এক সময় তাঁতসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত ছিল। এখানকার তাঁতিদের উৎপাদিত বিভিন্ন বাহারি ডিজাইনের গামছা, চাদর, শাড়ি ও বিছানার চাদর দেশের বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হতো।

তবে, সময়ের পরিক্রমায় এসব এলাকা থেকে তাঁত শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। তাঁত বস্ত্র উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও রাসায়নিক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এই উপজেলার তাঁত শিল্পের অস্তিত্ব বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। লাভজনক এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।

জানা যায়, বর্তমানে কাকিনা ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ তাঁত পরিবার রয়েছে। তাঁতের সঙ্গে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণে এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১৫০টি তাঁত শিল্প। অবিরাম লোকসানে পড়ে পেশা বদলেছেন অনেকেই। তাঁতিদেরও অভিযোগ- সুতা, রং, কেমিক্যালসহ তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের সব উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে সে অনুযায়ী উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি।

কাকিনা ইউনিয়ন এলাকার তাঁত মালিক সায়েদ আলী জানান, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাপড় তৈরির সুতা, শ্রমিকের পারিশ্রমিক এবং যানবাহনসহ অন্যান্য দ্রব্যাদির ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত গতিতে। তবে বাড়েনি কাপড়ের দাম ও চাহিদা। যে কারণে দিনের পর দিন বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছে তাঁত মালিক ও শ্রমিকরা।

তাঁত মালিক আব্দুর রহিম মিয়া বলেন, আমরা খুবই অস্বচ্ছল মানুষ। প্রয়োজনীয় পুঁজি ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো এই কুঠির শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারত। এখন তো তাঁত শিল্পের মৌসুম অন্যের কাছে টাকা ধার নিয়ে অল্প কিছু সুতা নিয়ে এসে কাজ করছি।

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, উপজেলাতে বেশকিছু তাঁত শিল্প আছে বলে আমি জানতে পেরেছি। উপজেলা প্রশাসন থেকে তাদের জন্য সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। খুব শিগগির আমরা তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।

সংবাদটি শেয়ার করুন