দেশে গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে বইছে ঝড়ো হাওয়া। আবহাওয়া অধিদফতর শঙ্কা প্রকাশ করেছে যে গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’-এ রূপ নিতে পারে।
উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি এবং নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে বলেছে অধিদফতর।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় আগের মতোই দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাগরে সব ধরনের ট্রলার ও নৌকা চলাচল নিষেধ করা হয়েছে।
আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপ আকারে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হ- খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু’-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশের দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত কমতে পারে।
বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়ার অধিদফতর জানা্য়, আজ সকালে গভীর নিম্নচাপটি আগের চেয়ে ভূখণ্ডের এগিয়ে এসেছে। এটি সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ছিল, তবে এখন সেটি ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে সকালে ছিল ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে,আর এখন ৭১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণপশ্চিমে, সকালে মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ৮৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এখন ১০০ কিলোমিটার এগিয়ে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে সকালে ছিল ৭৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এখন ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত ও ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে প্রাথমিকভাবে দিক পরিবর্তন করে উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ থেকে বেড়ে ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে বেড়ে ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ থেকে বেড়ে এখন ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। গভীর নিম্নচাপটির বর্ধিতাংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, সেইসঙ্গে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
গভীর নিম্নচাপটির বর্ধিতাংশ, অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা— সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা পরবর্তী সময়ে আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ:
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩টি দেশের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। নামের ক্রম অনুযায়ী এবার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে ‘সিত্রাং’।
আনন্দবাজার/কআ