নড়াইলের নবগঙ্গা নদীর উপর নির্মাণাধীন সেতুর নির্মাণকাজ এক বছর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৪ বছর পেরিয়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ৬২ ভাগ কাজ
নড়াইল-কালিয়া সড়কে নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের বারইপাড়া ও কালিয়া পৌরসভার পাঁচ কাউনিয়া অংশে নবগঙ্গা নদীর ওপর ৭২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬৫১.৮৩ মিটার লম্বা, ১০.২৫ মিটার প্রস্থ, ১৬টি পিলার ও ১৫টি স্প্যানের এ সেতুর নির্মাণ কাজ এক বছরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও গত ৪ বছরে নির্মিত হয়েছে মাত্র ৬২ ভাগ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, এমডি জামিল ইকবাল এন্ড মইনুদ্দীন বাশি জেভি ফার্ম ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ সেতুর কার্যাদেশ পায় এবং ২০১৯ সালের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। তবে, নির্মাণ কাজ শুরু করতে দেরি এবং ধীর গতির কারণে কাজটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এছাড়া ২০২০ সালের ২০ জুন বালু বোঝাই একটি বাল্কহেডের ধাক্কায় মাঝ নদীতে অবস্থিত ৯ নম্বর পিলারটি এবং পরবর্তী বছর ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একই পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হেলে যায়। এছাড়া নির্মাণাধীন আরও কয়েকটি পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া এবং কয়েকটি বাল্কহেড পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটনায় কালিয়া থানায় ৬টি জিডি ও মামলা হয়েছে।
কালিয়া সেতু নির্মাণ কাজের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, পর পর দুইবার একই পিলার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় নির্মাণাধীন সেতুর হেলে যাওয়া ৯নং পিলারের নকশা পরিবর্তণ করা হয়েছে। সেতুটির ৯নং পিলার বাদ দিয়ে ৮ থেকে ১০নং পিলারের মাঝে ঢালাই না দিয়ে স্টিলের স্প্যান বসানো হবে। এছাড়া পরবর্তীতে যাতে কোনো নৌযান দ্বারা পিলার আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য প্রতিটা পিলারের চারিদিকে ষ্টিলের বেষ্টনি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এ কারণে অতিরিক্ত ২৮ কোটি ব্যয় ধরা হয়েছে। সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৫ বার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। চতুর্থ দফার মেয়াদ শেষে কাজের অগ্রগতি ৬২ মাত্র ভাগ। ৫ম দফায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে সেতুটি নির্মিত না হওয়ার জন্য জনপ্রনিধিসহ স্থানীয় জনগণ ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
সেতু নির্মাণ কাজের ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী মিনহাজুল ইসলাম আরও বলেন, প্রথম দিকে বিভিন্ন কারণে দেরি হয়েছে। তবে এখন প্রায় ৫০-৬০জন শ্রমিক কাজ করছে। বর্তমানে পিলারের ওপর গার্ডার ও স্লাব বসানো এবং দু’পাশে সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। আগামী জুনের মধ্যে আমাদের অংশের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। তবে হেলে যাওয়া ৯ নম্বর পিলারের নতুন নকশার বিষয়ে কিছু জানিনা। এ পর্যন্ত মূল কাজ ও সংযোগ সড়ক মিলে ৬২ভাগ শেষ হয়েছে বলে তিনি জানান।
নড়াইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, ৯ নম্বর পিলার বার বার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় এটি না রেখে ৮ ও ১০ নম্বর পিলারের ওপর একটি স্টিলের স্প্যান বসবে। এজন্য ২৮ কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। সাধারণত এ ধরনের স্টিলের স্প্যান বিদেশ থেকে আনতে হয়। এর জন্য ন্যাশনাল টেন্ডার দিতে হবে। টেন্ডার কাজ সম্পন্ন হতে আগামী ৩ মাস লাগতে পারে। এছাড়া সেতুর অন্যান্য পিলার যাতে পরবর্তীতে বাল্কহেড বা অন্য নৌযান দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য আধুনিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। এসব কাজ শেষ করতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি বলেন, আমি এ সেতু নিয়ে হতাশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট অফিসসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বার বার কথা বলেছি দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করার জন্য। দ্রুত সেতুর কাজ শেষ করলে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের পথ উন্মুক্ত হবে।
জেলা শহর থেকে কালিয়া শহরের দুরত্ব ২৫ কিমি.। তবে, এ পথ যেতে এখন সময় লাগে দুঘণ্টা। নবগঙ্গা নদী কালিয়া উপজেলাকে জেলার অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। একটি মাত্র ফেরি দিয়ে বর্তমানে যানবাহন পারাপার চালু আছে। এতে অসংখ্য মানুষের অফিস-আদালত, আইন-শৃংখলা রক্ষা, ফায়ার সার্ভিস, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ব্যবসাসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াতে বেগ পেতে হয়। সেতুটি চালু হলে নড়াইল-যশোরের সঙ্গে গোপালগঞ্জ, বরিশাল এবং বাগেরহাট জেলার যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।