তপন সাহা (৬৫)। বয়সের ভারে স্বাভাবিক গতিতে চলতে ফিরতে তার অনেকটা কষ্ট হয়। তারপরও জীবন বাঁচাতে থেমে নেই তিনি। চায়ের ফ্লাক্স হাতে নিয়ে শহরের অলিগলি ঘুরে বিক্রি করছেন চা। যে বয়সে ছলে-মেয়ে আর নাতি-নাতনিদের সঙ্গে আনন্দে দিন কাটানোর কথা। সেই বয়সে এসে তিন বেলা খাবার জোটানোর জন্য অন্যের বোঝা না হয়ে পায়ে হেঁটে তিনি সকাল বিকাল করছেন রং চা। তবে চা বিক্রি করে যে টাকা আয় হয় তার উপর নির্ভর হয় চুলায় আগুন জ¦ালানো। টানা ৩০ বছর ধরে পৌর শহরে তিনি ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রি করে আসছেন। তপন সাহা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের রাধানগর এলাকার বাসিন্দা।
তপন সাহা বলেন, এক সময় তিনি পরিশ্রমের নানা কাজ করতেন। এক পর্যায়ে রাধানগর এলাকায় রাস্তার পাশে ছোট একটি দোকান গড়ে তুলে সেখানে তিনি চা বিক্রি করেন। দিন দিন সংসারে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় দোকানের চা বিক্রির সামান্য আয়ে তার সংসার চলা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তিনি দোকানে বসে চা বিক্রি ছেড়ে দেন। এরপর ফ্লাক্সে করে এক হাতে ফ্লাক্স আর অন্য হাতে একটি বালতিসহ অন্যান্য উপকরণ নিয়ে প্রতিদিন পৌর শহরের সড়ক বাজার, লালবাজার, রাধানগর এলাকায় পায়ে হেঁটে ঘুরে তিনি চা বিক্রি শুরু করেন। এতে তিনি এলাকায় মানুষের ভালো সাড়া পান। সারা দিনে ২শ’ থেকে আড়াইশ কাপ রং চা বিক্রি করেন। তিনি প্রতি এক কাপ রং চা বিক্রি করছেন ৫ টাকায়। তার তৈরি করা রং চায়েতে দেওয়া হয় আদা, লেবু আর কালিজিরা।
স্থানীয়দের কাছে তার চায়ের বেশ সুনাম রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রিতে খরচ বাদে দৈনিক তার ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকার উপর তার আয় হয়। এতেই চলে তার সংসার।
তপন সাহার পরিবারে স্ত্রী, ৪ মেয়ে ১ ছেলে রয়েছে। চা বিক্রির আয় দিয়ে তিনি তার ৪ মেয়েকে বিবাহ দেন। বর্তমানে তিনি অনেকটাই অসুস্থ। তাই বয়সের ভারে চলাফেরা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে।
অথচ, জীবন সায়াহ্নে এসে এখন চিন্তা করতে হচ্ছে তিন বেলা খাবার জোটানোর। সংসারের অভাব অনটন থাকায় প্রতিটি দিনই কাটে সীমাহীন এক অনিশ্চয়তায়। যে দিন চা বিক্রি করতে না পারে সে দিন একটি চা স্টলে মজুরিতে কাজ করেন বলে জানায়।
তিনি বলেন, মানুষ ইচ্ছে করলে সব কিছু করতে পারে। অন্যের কাছে হাত না বাড়িয়ে নিজে ছোট কোনো কাজের মাধ্যমে উপার্জন করা এর চেয়ে শান্তির আর কোনো কিছু নেই।
আজাদ মিয়া বলেন, ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি তিনি চা বিক্রি করছেন। এখন বয়স হয়েছে কিন্তু চা বিক্রি ছাড়েন নি। তার হাতের চা খুবই ভালো হয়। সকাল-বিকাল তার কাছ থেকে চা পান করা হয়।
খোরশেদ মিয়া বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন ধরে শহরে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে আসছেন। তুলনামূলক ভাবে তার চা অনেক ভালো হয়। সময় সুযোগ হলে তার কাছ থেকে চা খান বলে জানায়।
উপজেলা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি মো. মুসলেহ উদ্দিন ভূইয়া বলেন, তপন সাহা অসহায় মানুষ। জীবিকার প্রয়োজনে এ বয়সেও তিনি ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রি করছেন। জীবিকার জন্য দিন রাত এতো কষ্ট করলেও সে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে শিখেছে। কারো কাছে কখনো তিনি মাথা নথ করেনি।
আনন্দবাজার/শহক