বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে (জিএসআই) ২০২১ এর তুলনায় ২০২২-এ ৮ধাপ অবনতি ঘটেছে বাংলাদেশের। গত বছর ৭৬তম অবস্থানে থাকলেও চলতি বছর ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম স্থানে রয়েছে। সূচকে পাকিস্তান (৯৯তম), প্রতিবেশি ভারত (১০৭তম)।
বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ড-ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এবং জার্মানির ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ যৌথভাবে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক-২০২২ প্রকাশ করেছে।
বিশ্বের ১২১টি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিশু স্বাস্থ্য আর সম্পদ বণ্টনে বৈষম্যের মতো বিষয়গুলোকে মাপকাঠি ধরে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে।
পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের উচ্চতা, মৃত্যুহার, উচ্চতার তুলনায় ওজন, অপুষ্টি, এই চার বিষয় সামনে রেখে তৈরি হয় বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক।
চলতি বছরের এই সূচকে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ দশমিক ৬ স্কোর। যদিও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের এই স্কোর ছিল ২৬ দশমিক ৩। ২০২২-এ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১৩ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে দেশটি ৬৪তম অবস্থানে রয়েছে। এরপর ১৫ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে ৭১তম স্থানে রয়েছে মিয়ানমার।
২০২২ সালের জিএসআইয়ের স্কোর অনুযায়ী বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে অন্তত ৯টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এছাড়া ৩৫টি দেশের গুরুতর ক্ষুধা পরিস্থিতি রয়েছে।
উদ্বেগজনক ক্ষুধা রয়েছে এমন দেশগুলো হলো মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, মাদাগাস্কার, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে গুরুতর ক্ষুধা পরিস্থিতি বিরাজ করছে দক্ষিণ এশিয়ায়। এরপরই সাহারার দক্ষিণের আফ্রিকা অঞ্চলে দ্বিতীয় সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত পরিবেশ রয়েছে।
গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র খরার মুখোমুখি হয়েছে পূর্ব আফ্রিকার কিছু দেশ; যা সেখানকার লাখ লাখ মানুষের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে।
উত্তর আফ্রিকায় এবং পশ্চিম এশিয়ায় ক্ষুধা মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে; যেখানে ক্ষুধা প্রশমনের উদ্যোগ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্বে ক্ষুধা কম মাত্রায় রয়েছে লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবীয়, পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায়।
বিশ্বে যেসব দেশে ক্ষুধা কম এবং সূচকে ৫ এর নিচে স্কোর পেয়ে শীর্ষ ১৭ দেশের তালিকায় রয়েছে বেলারুশ, হার্জেগোভিনা, চিলি, চীন, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, কুয়েত, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। অর্থাৎ বিশ্বে এসব দেশে ক্ষুধা কম।
তবে, সূচকে একেবারে তলানিতে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন। ৪৫ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে দেশটি ১২১তম অবস্থানে রয়েছে।
সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারির বিষাক্ত ককটেল ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির সংকটে ফেলেছে এবং এই সংকটের ঝুঁকিকে আরও বৃদ্ধি করেছে।এছাড়াও ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ এবং খাদ্য, সার ও জ্বালানির মূল্যে আঘাত হেনেছে। আর এই সংকট ধীরে ধীরে বিপর্যয়কর রূপ নিচ্ছে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
২০২২ সালের বৈশ্বিক খাদ্য সংকট প্রতিবেদনে তীব্র ক্ষুধার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যাও ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর ১৯৩ মিলিয়ন বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আনন্দবাজার/কআ
