সমাজ সচেতন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সৃষ্টিশীল সত্তার সাফল্য ও খ্যাতি মূলত ঔপন্যাসিক হিসেবে। তার রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার, মূল্যবোধের অবক্ষয়, মানবমনের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রভৃতি বিষয় সুনিপুণ কলমের খোঁচায়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ ১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট, চট্টগ্রামের ষোলশহরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার মা নাসিম আরা খাতুন ছিলেন চট্টগ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী বংশের সন্তান এবং পিতা সৈয়দ আহমদউল্লাহ ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। এই কথা সাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন ১০ অক্টোবর ১৯৭১ সালে।
তার উপন্যাসে সাহিত্যে শুধু ব্যক্তি ও সমাজের চিত্ৰই বর্ণিত হয়নি, সুনিপুণভাবে বর্ণিত হয়েছে ব্যক্তি ও সমাজের অন্তর্নিহিত জটিলতার চিত্র। ‘লালসালু’ উপন্যাসে ভাগ্যান্বেষী মজিদের জীবনের প্রতিষ্ঠা, প্রাপ্তি ও সংগ্রামের কাহিনি নির্মাণ করতে গিয়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মু্লত পূর্ব-বাংলার গ্রামীণ সমাজের শৈল্পিক চিত্র তুলে ধরেছেন। লালসালু উপন্যাসে এমন এক গ্রামীণ সমাজের চিত্র তিনি এঁকেছেন যেখানে পূর্ব-বাংলার কৃষিভিত্তিক সহজ ও সরলমনা ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমাজের মানুষ বিভ্রান্ত হয় ধর্মব্যবসায়ীদের ভুল ব্যাখ্যার কারণে।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদের মহব্বত নগরে আগমন, মোদাচ্ছের পীরের মাজার ব্যবহার ও গ্রামবাসীদের প্রতারিত করে জোত-জমি দখল, রহীমা ও জমিলাকে বিয়ে করা, ধর্মের প্রতি নিজে একনিষ্ঠ না হয়ে গ্রামবাসীদের চিত্তে কৌশলে ধর্মভাব জাগিয়ে তাদের শাসন ও শোষণ করা, সাত ছেলের বাপ দুদু মিঞাকে অপমান করা, তাহের-কাদেরের বাপকে বিতাড়ন করা, আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে ব্যর্থ করা, পার্শ্ববর্তী গ্রামের পীরের সাথে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে লিপ্ত হওয়া, জমিলাকে ঝড়বৃষ্টির রাতে মাজারের পাশে খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে।
উপন্যাসে মনোসামাজিক জটিলতার চিত্র ফুটে উঠেছে। ‘লালসালু’ উপন্যাসের ঘটনা বিন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ কোনো প্রথাবিরুদ্ধ কাহিনি উপস্থাপন করেননি। বাংলা উপন্যাসের প্রচলিত পদ্ধতিই অনুসরণ করেছেন। ফলে ‘লালসালু উপন্যাসটি একটি সার্থক উপন্যাস হিসেবে পাঠক সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে। মানুষের হৃদয়ে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছে তার সার্থক উপন্যাস লাল সালু ।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক, সুনামগঞ্জ