ঢাকা | শুক্রবার
২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্যটনে নতুনদিগন্ত শেরপুরে

পর্যটনে নতুনদিগন্ত শেরপুরে

নদী, পাহাড়, বন, আর ঝর্ণা এ চারে অপরূপা পানিহাটা। প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে চলেছে গারো পাহাড় এলাকার পানিহাটা-তারানি পাহাড়। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষা ঘন সবুজ শ্যামল বন, খরস্রোতা পাহাড়ি ভোগাই নদী

মেঘ-পাহাড়ের লুকোচুরি দৃশ্য যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মনকে কাছে টানবে। জীবনের এক ঘেয়ামী আর ক্লান্ত পরিশ্রান্ত মনকে প্রফুল্ল করতে চলে আসতে পারেন সীমান্তবর্তী শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের প্রকৃতির নৈসর্গিক শোভা মন্ডিত পানিহাটা-তারানি পাহাড় এলাকায়। নদী, পাহাড়, বন, আর ঝর্ণা এ চারে অপরূপা পানিহাটা। প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে চলেছে গারো পাহাড় এলাকার পানিহাটা-তারানি পাহাড়। এখানকার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার সীমান্ত ঘেঁষা ঘন সবুজ শ্যামল বন, খরস্রোতা পাহাড়ি ভোগাই নদীর সঙ্গে মিতালি আর বৃক্ষরাজি দেখে ভ্রমণ পিপাসুদের মন উদ্বেলিত হয়। তারা কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে যান শহরের জীবনের কর্মক্লান্তি। প্রকৃতির নিখুত ভালোবাসায় হারিয়ে যান তারা স্বপ্নের রাজ্যে।

পানিহাটা-তারানির সৌন্দর্য্য : সীমান্তবর্তী এ পাহাড়ি অঞ্চলের চিরসবুজ বনানী আপনাকে দেবে মনের তৃপ্তি। পানিহাটা পাদ্রি মিশনের পশ্চিমে উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে উত্তর দিকে তাকালেই চোখে পড়বে মেঘালয়ের নীলাভ-সবুজ তুরা জেলা। যেখানে মেঘ-কুয়াশার আবরণে লুকোচুরি খেলে শত শত টিলা। আরও দেখবেন মেঘালয় রাজ্যের ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়কে ফাঁকি দিয়ে তুড়ার অববাহিকায় বয়ে চলা খরস্রোতা ভোগাই নদী। যার একপাশে সাদা কাঁশফুলে ঢাকা বন আর অন্যপাশে শত ফুট উঁচু সবুজ পাহাড়। সৌন্দর্যের দেখা মিলবে  ভোগাই নদীর তলদেশেও। এখানে স্বচ্ছ পানির নিচে নুড়ি পাথরগুলো ঝিকিমিকি করছে। সামনের একশ গজ দূরে উত্তরে ভারত অংশে পিঁচঢালা আকাবাঁকা রাস্তা পূর্ব থেকে পশ্চিমে পাহাড়ের বুকচিরে চলে গেছে। চারদিকে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ের সারি। পূর্ব দিকের কয়েকটি পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভোগাই নদীতে এসে মিশেছে ছোট একটি পাহাড়ি র্ঝণা। তার পাশেই খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের উপাসনালয় পানিহাটা পাদ্রি মিশন। এখানে আছে ছোট একটি চিকিৎসা কেন্দ্র, বিদ্যালয় আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের থাকার হোস্টেল। সেখানে শিশু-কিশোরদের কোলাহল। এসব মিলে প্রকৃতি প্রেমীদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে অপরূপা পানিহাটা-তারানি পাহাড়। অবশ্য এলাকার জনগণ এ পাহাড়টিকে পানিহাটা নামেই জানেন। এ সৌন্দর্য্যের ভাগটা শুধু পানিহাটাই নিতে পারেনি। এর একটা অংশে ভাগ বসিয়েছে পাশের তারানি গ্রামের পাহাড়। তাই দর্শণার্থীদের জন্য পানিহাটা-তারানি দুটো মিলেই গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। সবুজ চাদরে ঘেরা গারো পাহাড়ে প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান প্রকৃতির রাজ্যে। যারা শুনেছেন শেরপুরের বন্য হাতির তান্ডব তারা মিশনের পূর্বপাশে গারো উপজাতি পল্লীর অধিবাসীদের কাছ থেকে শুনতে পারবেন বন্যহাতির ধংসলীলার কথা। মার্তৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীন পরিচালিত গারোদের পরিবার প্রধান নারীরা। তাদের সহজ-সরল জীবন যেন ভ্রমণ পিয়াসীদের অবাক করে দেয়। তাদের জীবন সংগ্রাম কাছে থেকে দেখারও সুযোগ পাবেন এ গ্রামে। দারিদ্র আর বন্যহাতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা এসব গারো উপজাতিদের জীবনযাত্রা ও অকৃত্রিম আতিথিয়তা দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমণ পিয়াসীরা। বর্তমান কৃত্রিমতার যুগে প্রকৃতির নির্মিত সবুজ বনানী দেখে কর্মক্লান্তি ভুলে অনাবিল আনন্দে দিনের আলোতেই ভ্রমণ পিয়াসীরা ফিরে যান নিজ ঘরে।

আসা যাওয়া : জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিমি. সোজা উত্তর দিকে নিজস্ব পরিবহন বা সিএনজি যোগে সড়ক পথে সরাসরি চলে আসুন নাকুগাও স্থলবন্দর এলাকায়। ভোগাই নদীর ব্রিজের উপর দিয়ে পূর্ব দিকে প্রায় ২-৩ কিমি. যাওয়ার পর ঘন সবুজ পাহাড় মাড়িয়ে উত্তর দিকে পানিহাটা-তাড়ানি পাহাড়ে ঢুকে পড়ুন। বিনা টিকিটে উপভোগ করুণ প্রকৃতির নয়নাভিরাম দৃশ্য। যদি নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে আসতে চান তাহলে সড়ক পথে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত এ স্থানটি। শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় থেকে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাঁও পরে পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত ভোগাই ব্রিজ পাড়ি দিতে হবে। এরপর সোজা পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিমি. গেলে চায়না মোড়। এ মোড়ে এসেই আবারও গতিপথ বদলিয়ে যেতে হবে সোজা উত্তরে। এ রাস্তা ধরে প্রায় এক কিলোমিটার গেলেই পানিহাটা-তারানির সবুজ শ্যামলময় পাহাড়ি এলাকা। সেখান থেকে ভিতরে ঢুকতেই দেখতে পাবেন সবুজের সমারোহ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিকশা, সিএনজি অটোরিশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় জেলা শহর থেকে আর নালিতাবাড়ী শহর থেকে মাত্র ৩৫-৪৫ মিনিটের ব্যবধানে এবং অল্প খরচের মধ্যেই চলে যাবেন আপনার গন্তব্যস্থলে। মোটরসাইকেলে জেলা শহর থেকে আসা-যাওয়ার ভাড়া পড়বে ৫ থেকে ৬শ  টাকা। এখানে পিকনিক বা বেড়ানোর জন্য যে কারণেই আসুন না কেন বেলা শেষে জেলা বা উপজেলা সদরের আবাসিক হোটেলে বা সরকারি ডাকবাংলোতে রাত যাপন করতে হবে। এখানে ভালো মানের কোন খাবার হোটেল নেই। তাই নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।

পর্যটনে সম্ভাবনাময় পানিহাটা-তারানি পাহাড় এলাকাটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে এখানে প্রতিবছর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় জামান। এখানে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে শেরপুরের পর্যটনশিল্প যেমন বিকশিত হতো, সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পেতো ।

সংবাদটি শেয়ার করুন