বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দেশে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এসব বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনে কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
এ প্রক্রিয়া শুরু হলে দেশে বর্জ্য সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এর জন্য বিভিন্ন মডেল আছে। উন্নত দেশের মডেল অনুসরণ করে আমাদের দেশেও অনুরূপভাবে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষা এবং মানুষের স্বাস্থ্যের কথা মাথা রেখে আমাদের দেশের জন্য কার্যকর সেই মডেল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, এমপি বলেছেন, মানবতার বিবেচনার জন্য প্লাস্টিক দরকার। বিশে^ একশ বছর আগে ১০০ কোটি লোক ছিল এখন তা সাড়ে ৭শ কোটি। প্লাস্টিক মানবসভ্যতার উন্নয়নে বেসিক হিসেবে কাজ করেছে। রোগীদের ওষধের মোড়কে প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার আগে ৯৮-৯৯ শতাংশ মানুষের গায়ে কাপড় ছিল না। ১২৯ থেকে ১৯৫ মার্কিন ডলার হয়েছিল ২০০৮ পর্যন্ত। পরবর্তীতে তা বেড়েছে। আমরা প্লাস্টিকের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারবো।
এফবিসিসিআই ও ইউনিলিভারের যৌথ উদ্যোগে ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য নীতি সহায়তা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি। শনিবার রাজধানী ঢাকার হোটেল শেরাটনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রী বলেন বলেন, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি লাভজনক ব্যবসায়িক উদ্যোগ হিসেবে গ্রহণ করা গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সার্কুলার বা চক্রাকার প্রক্রিয়া অনুসরণ করাকে কার্যকর সমাধান হিসেবে মনে করেন মন্ত্রী।
সার্কুলার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ভ্যালু চেইনের অংশীদারদের ক্ষমতায়ন ও অনানুষ্ঠানিক খাতকে সামগ্রিক সহযোগিতা প্রদান করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। ভ্যালু চেইনে অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ভাঙ্গারি ও বর্জ্য সংগ্রাহকরা রয়েছেন।
এই খাতটি অনানুষ্ঠানিক হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে এই খাতে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি, একই সঙ্গে পরিবেশ ও অর্থনীতির স্বার্থেই টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি উপযোগী কাঠামো তৈরির তাগিদ দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন বলেন, “বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর সাথে বহু অংশীজন ও খাত সম্পৃক্ত। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও ব্র্যান্ডগুলোর সাথে সমন্বিত উদ্যোগে নীতি প্রণয়ন জরুরি।
একটি সার্কুলার বা চক্রাকার প্লাস্টিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত কর্মকৌশল চিহ্নিত করতে হবে। এবং কার্যকর প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি ও বেসরকারিখাতগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
মো. শাহাবুদ্দিন এমপি বলেন, পরিবেশবান্ধব ও দূষণমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইউরোপ-আমেরিকায় পলিথিন ব্যবহার করলেও আমাদের রাস্তায় যেভাবে পরে থাকে তা সেখানে নেই। প্লাস্টিকের বাজার ২.৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্লাস্টিকের বর্জ্য মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একক ব্যবহার প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে নীতিমালা করা হচ্ছে।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, ভিশন ২০৪১ এ টেকসই নগরায়ন লক্ষ্যের অবিচ্ছেদ্দ্য অংশ হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে প্লাস্টিক বর্জ্যকে টেকসই উপায়ে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। সরকার পলিসি সাপোর্ট দিবে। ১৯৭৩ সালে পানি দূষণ বিষয়ে আইন হয়েছে। মালয়েশিয়া ২০২৫-৩০ প্লাস্টিক নীতিমালা তৈরি করেছে। ২০০ বছরেও অনেক প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যায়। ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলালের মার্কেট আছে বিশ্বে।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মোঃ সালাহউদ্দিন আলমগীর, মোঃ আমিন হেলালী, হাবীব উল্ল্যাহ ডন, পরিচালকবৃন্দ ও এফবিসিসিআই’র মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক ও কর্পোরেট কমিউনিকেশন ও পার্টনারশিপ প্রধান শামীমা আক্তার।
আনন্দবাজার/কআ