- ১২ হাজার টাকার পানের কুড়ি এখন ৩০০ টাকা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কয়েক সহস্রাধিক পান চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পানের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন এসব চাষিরা। পান উত্তোলন করে উল্টো সঞ্চয় থেকে শ্রমিকদের মজুরি দিতে হচ্ছে। কারণ গাছ থেকে পান উত্তোলন না করলে পান গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলছেন চাষিরা। চলতি মৌসুমের এ বড় ধরনের ক্ষতির পুষিয়ে উঠতে চাষিদের জন্য অনেক কষ্টসাধ্য বলছেন তারা। আর এতে অনেক সময় লাগবে বলে ধারণা করছেন চাষিরা।
উপজেলার কয়েক হাজার চাষিরা এখন অর্থ সংকটে রয়েছেন। অনেক চাষিরা গত মৌসুমের লাভের সঞ্চয় খরচ করে এখন পান চাষ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। পান উত্তোলন না করলে গাছ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই ঋন নিয়ে শ্রমিকদের খরছ বহন করছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন ক্ষুদ্র পান চাষিরা । তাদের পান চাষ এখন গলার কাঁটা হয়ে দাড়িঁয়েছে। জুয়েল আহমদ নামের এক পান চাষি জানান, আনান্য মৌসুমে এত কম দাম পাইনি । এবার পানের দাম খুব কমে গেছে। পান তুলে শ্রমিকদের খরছ নিজের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। আরেক পান চাষি রুহিন আহমদ জানান, মাত্র ২ শত টাকা থেকে ৩ শত টাকা পানের কুড়ি বিক্রি হয়। ২ কুড়ি ৬০০ টাকা বিক্রি করলে ১ হাজর ২ শত টাকা মজুরি দিতে হয় । তাহলে লাভ কোথায় ?
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বাগানে শ্রমিকরা পান উত্তোলনের কাজ করছেন। পানের লম্বা লম্বা গাছে বাঁশের মই দিয়ে পান তুলছেন তারা। মছদ্দর আলী নামের এক শ্রমিক জানান, পান তুলার আয় দিয়ে সংসার চলে। দৈনিক ৩-৪ শত টাকা মজুরিতে কাজ করি। পান চাষি জয়নাল আহমদ বলেন, সারা দিনে ২ কুড়ি পান তুলে ২ জন শ্রমিককে ১ হাজার ২ শত টাকা মজুরি দিতে হয় । কিন্তু ২ কুড়ি পান বিক্রি করে মাত্র ৬০০ টাকা পাই। ভর্তুকি দিতে হয় ৬০০ টাকা। উপজেলার কয়েক শতাধিক খাসিয়া পান জুমে বছরে কোটি টাকার উপরে পান চাষে আয় হয়। কিন্তু এসব জুমের চাষিরা রয়েছেন লোকসানে। ফানাই, কুকিঝুরি, পুটিছড়া, লবনছড়া, ইছাছড়াসহ শতাধিক খাসিয়া পান জুম রয়েছে ব্যাপক লোকসানে। পানের বড় যোগান আসে এসব পান পুঞ্জি থেকে। পান চাষে সংশ্লিষ্টরা এখন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। পান জুম চাষি প্রিজারসন আরেং বলেন, জুমে পান চাষ করে লোকসান হয়েছে। খরছ বেশি আয় কম। সবকিছুতে দাম বাড়ায় শ্রমিকদের মজুরি বেশি দিতে হয়। কুলাউড়াসহ সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে পান বিক্রি হয় কুড়ি হিসেবে। স্থানীয় ভাষা ও স্থানীয় হিসেবে ১২ টি পানে হয় ১ ছলি, ১২ ছলিতে ১ মোটা, ২০ মোটায় হয় ১ কুড়ি। অর্থাৎ ১ কুড়ি পানে থাকে ২ হাজার ৮ শত ৮০ টি পান । বর্তমান বাজার দরে ৯ টি পানের দাম পড়ে ১ টাকা। যেখানে গত বছরে ১ টি পানের মূল্য ছিল ৪ টাকা।
তবে হটাৎ পানের দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বন্যা ও অধিক উৎপাদনকে দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা। পান ব্যবসায়ী জমির মিয়া বলেন, বন্যা হওয়ায় সুনামগঞ্জ এলাকায় পানের চাহিদা কমে গেছে। তাছাড়া এবার ব্যাপক পানের ফলন হওয়ায় বাজার মূল্যে ধস নেমেছে। আদিবাসি নেত্রী ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, কয়েক মাস থেকে পানের দাম খুম কম। এ অবস্থায় পান জুম চাষিরা ঋন নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। সবকিছুর দাম বাড়ায় হুমকিতে রয়েছে খাসিয়া জনজীবন। বাঙালি এলাকায় পানের ফলন বাড়ায় দাম কমে গেছে বলে মনে করেন তিনি।