ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবসরে গেলে সমস্যা নেই

অবসরে গেলে সমস্যা নেই
  • আমার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমেরিকার নির্দেশে ও ব্যবস্থাপনায় র‌্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ান-র‌্যাবকে তৈরি করা হয়েছে। তারাই ট্রেনিং দিয়েছে। যেমন ট্রেনিং আমেরিকা তাদের দিয়েছে তারা ঠিক সেভাবেই কাজ করছে। এখানে আমাদের কী করার আছে?

গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাস্ট্রের সফর ও জাতিসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শুরুতে লিখিত বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

লিখিত বক্তব্য শেষে এক সাংবাদিক মার্কিন-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে মূল্যায়ন জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয় আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল নীতি। আমাদের দেশের একটি অংশ দেশের বদনাম করে অন্যদের কাছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই ছিল আমার মূল লক্ষ্য। আজ আমার সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এখন অবসরে গেলেও কোন সমস্যা নেই। কোন একজন কাউন্সিলরও যদি আমাকে না চান তবে আমি ক্ষমতায় থাকবো না। নেতা নির্ধারণের দায়িত্ব তাদের। তারাই নির্ধারণ করবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কে থাকবে।

আওয়ামী লীগের আগামী (ডিসেম্বর-২০২২) কাউন্সিলে নতুন নেতৃত্ব আসবে কি না অথবা তিনি নিজে নেতৃত্বে থাকবেন কিনা সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান আরো বলেন, আমি নিজে থেকে নেতৃত্বে থাকতে চাই না। কাউন্সিলরা যা চাইবে তাই হবে। কেউ একজন কাউন্সিলরও যদি আমাকে না চান তবে আমি থাকবো না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলাম তা অর্জন হয়েছে। দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সব ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এখন প্রকল্পগুলো ৩ ভাগে ভাগ করে অনুমোদন দিচ্ছি ও বাস্তবায়ন করছি। যেগুলোর দ্রুত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব তা আগে করা হচ্ছে। তবে কিছু গণমাধ্যম সবসময় নেতিবাচক চিন্তা করে ও ছড়িয়ে দেয়। এটি যুগ যুগ ধরে চলেছে। তবে এদিকে আমরা বেশি মনযোগ দিচ্ছি না।

শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধীদল থেকে আন্দোলনের হুমকি-ধামকি কিছু পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিরোধীদল শক্তিশালী থাকলে তো ভালো হয়। ১ মার্কিন ডলার রিজার্ভ নিয়ে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলাম। তা উন্নীত করি। দেশের গ্যাস বিক্রি করিনি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি।

শরণার্থী সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ থেকে কি ধরনের আশ্বাস পেয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে বন উজাড় হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে বিপদে পড়ছে। আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছিলাম। মিয়ানমারকে বারবার বলছি তাদের লোক নিজেদের দেশে নিয়ে যেতে। আমেরিকার বিশাল দেশ অনেক জমি পড়ে আছে তাদেরকে সেখানে নিতে বলেছি।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, জাতীয় আদালত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলায় সমর্থন প্রদান, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা করা, আসিয়ানের পাঁচ দফা ঐকমত্যে মিয়ানমারের অঙ্গীকারসমূহ ও কফি আনানের কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করা, মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাকারীদের নির্বিঘ্নে প্রবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এক দেশ আরেক দেশকে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে এতে কার লাভ? একটি দেশ কি করে আরেকটি দেশকে নিষেধাজ্ঞা দেয়? কে অস্ত্র বিক্রি করছে? এসব বন্ধে জোরালো আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্য প্রস্তুতে আলাদা বাজেট রাখা হয়েছে। যাতে কেউ না খেয়ে থাকতে না হয়। আর যার যতটুকু জমি আছে তা চাষ করুন। নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যান।

জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারি ও অর্থনৈতিক সংকট নিরসেনে কি উদ্যোগ ও আগামী ভালো একটি পৃথিবী পাবো কিনা এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে পারি তাহলে হয়তো ভালো থাকা যাবে। তবে বিশ্বের অন্যান্য মানুষ কষ্টে থাকলে আমরা কি করে ভালো থাকবো? বর্তমানে প্রকৃতি বিরুপ, চলছে ইউক্র্যান-রাশিয়া যুদ্ধ ও মহামারি। সবমিলে সবাই কষ্টে আছে। দেশে যথেষ্ট খাদ্য আছে। প্রয়োজনে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া বা অন্যান্য দেশ থেকে খাদ্য আনা যাবে।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডনে যান এবং সেখানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া এবং রাজা তৃতীয় চার্লস আয়োজিত সংবর্ধনায় যাগদান করেন। তিনি ১৯ সেপ্টেম্বর, নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে, ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং এর পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দিনের সফর শেষ করে ৪ অক্টোবর দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদটি শেয়ার করুন