ঢাকা | শুক্রবার
২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডুবুরি সংকটে বাড়ছে প্রাণহানি

ডুবুরি সংকটে বাড়ছে প্রাণহানি

উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১১ ডুবুরি, নেই নৌযান

  • নৌকাডুবির ঘটনায় বেড়েছে আতঙ্ক
  • জনবল বৃদ্ধির আহ্বান বিশেষজ্ঞদের

উত্তরাঞ্চলে স্বাধীনতার আগে কিংবা পরে নৌকাডুবির ঘটনায় এত প্রাণহানি এটিই প্রথম। যেহেতু এই অঞ্চলে পদ্মা, যমুনা, ব্রক্ষ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, করতোয়ার মতো বৃহৎ অনেক নদী রয়েছে তাই সময় এসেছে ফায়ার সার্ভিসকে ঢেলে সাজানো, দক্ষ লোকবল নিয়োগ ও উন্নত দেশে নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া। কথাগুলো বলছিলেন দেশের প্রখ্যাত নদী গবেষক ড.তুহিন ওয়াদুদ। এই নদী গবেষক আরো বলেন, পঞ্চগড়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে তাতে ফায়ার সার্ভিস দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। একে একে লাশগুলো উদ্ধার করতে পেরেছে। ফলে স্বজনদের যে হতাশা আর ক্ষোভ ছিল তা দ্রুত কমে গেছে।  উদ্ধার অভিযান দেরিতে হলে জনবিস্ফোরণ ঘটার একটি সম্ভবনা ছিল। কিন্তু রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিনের সুনিয়ন্ত্রিত নেতৃত্বে কঠিন কাজটি সহজ হয়েছে বলে মনে করেন এই গবেষক।

এদিকে উত্তরাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষের জন্য ফায়ার সার্ভিসে রয়েছে মাত্র ১১ জন ডুবুরি। এই ১১ জন ডুবুরি সব সময় বিভাগীয় হেড কোয়ার্টার রংপুর ও রাজশাহীতে অবস্থান করেন। নদীতে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা একেবারে কম। পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি ট্র্যাজিডিতে উদ্ধার অভিযানে ডুবুরির সংখ্যা কম থাকায় ফায়ার সার্ভিসের অসহায়ত্ত ফুটে উঠলেও তারা তাদের সামান্য জনবল দিয়ে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। উত্তরের কোনো নদীতে দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধারে নেই কোনো নিজস্ব জলযান। কোথাও উদ্ধার অভিযানে গেলে তাদের স্থানীয়দের নৌকা নিয়ে উদ্ধার অভিযান চালাতে হয়।

উত্তরের ১৬ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে নদী রয়েছে প্রায় শতাধিক। এর মধ্যে তিস্তা, পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, করতোয়া, ধরলা, ঘাঘট ইত্যাদি নদী রয়েছে। এসব নদী বর্ষার সময় অনেক বেশি খরস্রোতা থাকে। শুকনো মৌসুমে এই অঞ্চলের নদ-নদীতে পানি কম থাকার কারণে অনেকে বড় ধরনের নৌ-দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করেন না। এ কারণেই এই অঞ্চলে বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত নৌ-দুর্ঘটনার উদ্ধারের জনবল ও নৌযান সংকটের বিষয়টি। উদ্ধার অভিযানে নিজস্ব কোনো নৌযান না থাকাকে অনেকে দুঃখজনক বলে মনে করছেন।

রংপুর ও রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের বিভাগীয় অফিস সূত্রে জানা গেছে,  রংপুর বিভাগের আট জেলায় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন রয়েছে ৬০টি। অপরদিকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন রয়েছে ৬৮টি। ১৬ জেলায় জলপথে দুর্ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য রয়েছে মাত্র ১১ জন ডুবুরি। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে পাঁচজন এবং রাজশাহী বিভাগে ছয়জন। এসব ডুবুরি সব সময় বিভাগীয় অফিসে থাকেন। জলপথে উদ্ধার অভিযানের জন্য উত্তরের কোনো জেলায় ফায়ার সার্ভিসের নিজস্ব জলযান নেই। তবে রংপুর বিভাগে একটি জেমিনি বোট রয়েছে যা হালকা কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নদীতে উদ্ধার অভিযান চালাতে গেলে স্থানীয়দের নৌকায় তাদের উদ্ধার অভিযান চালাতে হয়।

ফায়ার সার্ভিসের সূত্রমতে, পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিতে গতকাল সোমবার পর্যন্ত ৬৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে রংপুর ও রাজশাহীর ডুবুরিরা এখনো পঞ্চগড়ে অবস্থান করছেন। 

উত্তরাঞ্চলে ডুবুরি সংখ্যা কম ও জলযান না থাকা প্রসঙ্গে জেলা সুজনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে বরাবরই উত্তরাঞ্চল অবহেলিত। ১২৮টি ফায়ার স্টেশন এই অঞ্চলে। এখানে একটি উদ্ধারকারী জলযান নেই এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি ডুবরি সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এই অঞ্চলে বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে নদ-নদীতে পানি কম থাকে। তাই দুর্ঘটনাও কম। তবে জলযান ও ডুবরি সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।

রংপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন ও রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক অহিদুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ে নৌ দুর্ঘটনায় তাদের ডুবরি দল উদ্ধার অভিযানে কাজ করেছেন। তারা বলেন, উদ্ধার অভিযানে তাদের নিজস্ব কোনো নৌযান নেই। তবে তাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।

সংবাদটি শেয়ার করুন