সরকার নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। কমানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। বিক্রি করা হচ্ছে ভর্তুকি হারে। তবুও ধরা যাচ্ছে না লাগাম টেনে। বেড়েই চলেছে চালের দাম। দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। ৫০ কেজির চালের বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ৩০০-৪০০ টাকা। আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছে, চাল রপ্তানিতে ভারতের শুল্কারোপের পর হঠাৎ করেই বাজারে চালের দাম আরো এক দফা বেড়ে গেছে।
খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতি বস্তা সিদ্ধ মোটা চাল ২৩০০ টাকা, স্বর্ণা ২৫৫০ টাকা, মিনিকেট (বেতি) ২৮০০ টাকা, পাইজাম ৩০০০ টাকা ও জিরাশাইল (কাটারি) ৩৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ জুলাইয়ের শেষে বাজারে প্রতি বস্তা সিদ্ধ মোটা চাল ২১০০ টাকা, স্বর্ণা ২২০০-২২৫০ টাকা, মিনিকেট (বেতি) ২৫০০-২৬০০ টাকা, পাইজাম ২৪০০-২৬০০ টাকা ও জিরাশাইল (কাটারি) ৩০০০-৩২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আতপ চালের মধ্যে বর্তমানে মিনিকেট (বেতি) ২৭০০ টাকা, ইরি ১৮০০ টাকা ও জিরাশাইল (কাটারি) ৩৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই মাস আগে বাজারে মিনিকেট (বেতি) ২৩০০-২৫০০ টাকা, ইরি ১৭০০- টাকা ও কাটারি ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
খাতুনগঞ্জের চালের আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে উর্ধ্বমুখী রয়েছে প্রধান ভোগ্যপণ্য চালের দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি বৃদ্ধি করতে গত ২৮ আগস্ট চালের নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরো এক দফা কমিয়ে আনে সরকার। এরপর ভারত থেকে আমদানি বাড়লে দাম কিছুটা স্থিতিশীল হয়। কিন্তু গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার চাল রপ্তানিতে নতুন করে শুল্কারোপ শুরু করলে দেশীয় বাজারে দাম আরো এক দফা বেড়ে যায়। ৯ সেপ্টেম্বরের পর থেকে এই পর্যন্ত প্রতি বস্তা চালে কমপক্ষে ১০০-১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে আগস্টের শুরুর দিকে আরো এক দফা বৃদ্ধি পেয়েছিল চালের বাজার। সেই হিসেবে, গেল দুই মাসে পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা চালে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
চালের পাইকারি বাজার চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ী শরিফ আহমেদ বলেন, সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পর বাজারে চালের দাম কিছুটা কমে আসছিল। তবে সম্প্রতি চাল রপ্তানিতে ভারতের শুল্কারোপের পর হঠাৎ করেই বাজারে চালের দাম আরো এক দফা বেড়ে গেছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্কারোপ শুরু করে ভারত। আতপ চালের উপর এই শুল্কারোপ করলেও দেশীয় বাজারে আতপ ও সিদ্ধ উভয় চালের দামই বেড়ে চলেছে। এখন ভারত থেকে চাল আসছে ঠিকই, কিন্তু সেগুলো বাজারে নেই। আমদানিকারক, মিল মালিক ও করপোরেট গ্রুপ মিলিয়ে একটি সিন্ডিকেট চলছে। যারা দেশে চালের আমদানি ও সরবরাহের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে বাজারে সুফল মিলছে না
চাল ব্যবসায়ীরা বলছে, ভারত থেকে সবচেয়ে কম দামে বুকিং ছিল আতপ চালের, টন প্রতি ২৮০-৩০০ ডলার। আর সিদ্ধ চালের বুকিং ছিল ৩৮০ থেকে ৪২০ ডলার। কিন্তু আমদানির অনুমতি থাকলেও ডলারের বাড়তি দাম ও ভারতের শুল্কারোপের কারণে আমদানিতে গতি নেই। ফলে আমদানি বৃদ্ধি পেয়ে পণ্যটির দাম কমে আসার কথা থাকলেও সেটা হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের উচিত আমদানি উম্মুক্ত করে দেওয়া। আমদানি উন্মুক্ত হলে যে যার মতো করেই চাল আমদানি শুরু করবে। সেই চাল দ্রুত বাজারে পৌঁছাবে, দাম কমে যাবে। ফলে শিল্পগ্রুপগুলোর সিন্ডিকেট চাল মজুদ করে রাখতে পারবে না।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুল্কহার কমানোর জন্য রাজস্ব বোর্ডের দেওয়া প্রজ্ঞাপনের পর চাল আমদানি কিছুটা পতি পায়। খাদ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত ৩৯৮ প্রতিষ্ঠানকে ১২ লাখ ৪১ হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এরমধ্যে গত ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৩৩ হাজার ৫শ টন চাল দেশে পৌঁছেছে। আমদানিকৃত এসব চালের ২৪ টন ছাড়া বাকি সব এসেছে ভারত থেকে।
উর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে গত ২৩ জুন চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ওই সময় চালের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়। পাশাপাশি ২৫ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা নিয়ন্ত্রকমূলক শুল্ক। এরপর গত ২৮ আগস্ট নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরো ৫ শতাংশ কমিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেদ্ধ চাল (বয়েলড রাইস) ও আতপ চাল আমদানিতে এ সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, শুল্ক কমানো, ন্যায্যমূল্যের চাল বিক্রিসহ অনেক উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। কিন্তু ভোক্তার চেয়ে এর বেশি সুফল পেয়েছে আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। চালের দাম কমিয়ে আনতে আমদানিকারক, মিলার ও পাইকারি আড়তগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।