নিরাপদ মাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ লবণ উপস্থিতি
*আচার ও চাটনির ৮৩ শতাংশ,
*চিপসের ৬৩ শতাংশ,
*ডাল-বুট ভাজার ৬০ শতাংশ
প্রক্রিয়াজাত খাবারের ৬১ শতাংশে লবণের উপস্থিতি তথা ‘নিরাপদ মাত্রার’ চেয়ে দ্বিগুণ থাকার কথা এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বুধবার (২৮সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি)।
বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ঝালমুড়ি, আচার ও ইনস্ট্যান্ট স্যুপের মত প্রচলিত বেশিরভাগ প্যাকেটজাত খাবারে লবণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত।
প্রকাশিত গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, আচার ও চাটনির ৮৩ শতাংশ, চিপসের ৬৩ শতাংশ, ডাল-বুট ভাজার ৬০ শতাংশ খাবারে লবণের উপস্থিতি দ্বিগুণ।
দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ এসব প্রকৃয়াজাত খাবার গ্রহণ করায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে উচ্চরক্তচাপসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকির কথা বলছেন চিকিৎসকরা।
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রকাশকরা খাবার প্যাকেটজাতকারী বড় কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকা ও ভোক্তাদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গবেষণা সমন্বয়কারী ও ফাউন্ডেশনের রেজিস্টার ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ডা. শেখ মো. মাহবুবুস সোবহান সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ‘অ্যাসেসমেন্ট অব সল্ট কন্টেন্ট অ্যান্ড লেবেল কমপ্লায়েন্স অব কমনলি কনজিউমড প্রোসেসড প্যাকেজড ফুডস অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ গবেষণা পরিচালনা করে। এতে দেশের আটটি বিভাগে বিভিন্ন বয়সের ৯৭৪ জন অংশ নেন।
এতে ১৬টি প্যাকেটজাত পণ্যের ১০৫টি নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয় বলে জানা গেছে।
এতে আরও জানানো হয়, প্রতি ১০০ গ্রাম খাবারে লবণের নিরাপদ মাত্রা ৭৫০ মিলিগ্রাম বিবেচনা করেছে এনএইচএফবি। গবেষণার তথ্যে দেখা গেছে, বাজারে প্রচলিত ৬১ শতাংশ প্যাকেটজাত বিস্কুট, চিপস, চানাচুর, নুডলস, ইনস্ট্যান্ট স্যুপ, ঝালমুড়ি, আচার, চাটনিতে লবণের উপস্থিতি এর চেয়ে বেশি।
গবেষণার অন্তর্ভুক্তি খাবারের ৪৪ শতাংশ প্যাকেটে উল্লেখিত পরিমাণের চেয়েও বেশি লবণ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক ডা. আবদুল আলীম বলেন, খাবারে লবণের পরিমাণ কতটুকু তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্যাকেটের গায়ে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কোন নিয়মের তোয়াক্কা করছেনা।
তিনি আরও বলেন, “তারা ডিক্লেয়ারেশন দিচ্ছে যে এক গ্রাম লবণ আছে, কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ছয় গ্রাম। এটা খুবই খারাপ। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যারা খাবার প্যাকেটজাত করছে তাদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে পাশাপাশি ভোক্তাদের সচেতন হওয়া জরুরি।”
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী জানান, “প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। লবণ বেশি খেলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়ে, অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এ কারণে আমরা যদি লবণ খাওয়া কমাতে পারি তাহলে উচ্চ রক্তচাপ কমবে, অন্যান্য আরও কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে যাবে।”
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খালেদা ইসলাম, অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর এর বাংলাদেশ প্রধান মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, এনএইচএফবির সল্ট রিডাকশন প্রোগ্রামের পরামর্শক আবু আহমেদ শামীম, বিএসটিআইয়ের উপ পরিচালক মো. এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
আনন্দবাজার/কআ