ঢাকা | শুক্রবার
৩রা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইডেনকাণ্ডে সমালোচনার ঝড়

ইডেনকাণ্ডে সমালোচনার ঝড়
  • বড়ভাইদের আশ্বাসে বন্ধ অনশন

বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচনায় ঐতিহ্যবাহী ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ নেত্রীরা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম, অনিয়মের অভিযোগের পর এবার সধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও খোদ বর্তমান কমিটির প্রায় ২৫ জন নেত্রী ফুঁসে উঠেছেন। এ নিয়ে জড়িয়েছেন মারামারিতেও। দুপক্ষের সংঘর্ষে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা রাজিয়াসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন।

পদক্ষেপ হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ গত মঙ্গলবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে। এছাড়াও ১৬ জন নেতা-কর্মী কে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়া নেতা-কর্মীরা এ আদেশ মেনে না নিয়ে অনশন করার সিন্ধান্ত নেয়। তারা গতকাল সোমবার সকালে নিজ ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আমরণ অনশন করার কথা জানান। তবে অনশনের ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বড় ভাইদের আশ্বাসে অনশন বাদ দিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন তারা।

ধানমন্ডির আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পর ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমরা বিষয়গুলো বড় ভাইদের জানাতে এসেছিলাম। জানিয়ে এখন চলে যাচ্ছি। সমস্যা সমাধানে তারা দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা কোনো অনশনে নেই। আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই।

এর আগে হলে সিট বাণিজ্য ও সহপাঠীদের সাথে খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠেছে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। যার জেরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে মারামারিও হয় ছাত্রলীগের দু গ্রুপের মধ্যে। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইডেন কলেজে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন এক পক্ষের ছাত্রলীগ নেত্রীরা।

তারা বলেন, কমিটির সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসকে প্রাণনাশের চেষ্টা করেছেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বিষয়টি নিয়ে কলেজ প্রশাসনের নীরবতায় নিন্দা জানান আন্দোলনকারীরা। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকেও এই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আয়েশা সিদ্দিকা হলের সামনে ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসের ওপর ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা রাজিয়ার উপস্থিতিতে তাদের অনুসারীরা হামলা চালায়। এই হামলায় জড়িতরা হলেন সহ-সভাপতি নুজহাত ফারিয়া রোকসানা, আয়েশা সিদ্দিকা মিম, আর্নিকা তাবাসসুম স্বর্না, শিরিনা আক্তার, সোমা মল্লিক পপি, জিনাত হাসনাইন, লিমা ফেরদৌস আশরাফ লুবনা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিতু আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুন্নাহার জ্যোতি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারজানা ইয়াসমিন নীলা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জান্নাতুল ফেরদৌসের কক্ষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা প্রবেশ করে তার ল্যাপটপ, অর্থসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানানোর পর ১২ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও জান্নাতুল ফেরদৌসের কোনো জিনিসই তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।

এছাড়াও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের একচেটিয়া রাজনৈতিক আচরণে অতিষ্ট হয়ে বাকি নেতৃবৃন্দ এর প্রতিবাদ করতে বাধ্য হচ্ছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং তাদের অনুসারীদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এছাড়া ক্যান্টিনে চাঁদাবাজি, ইন্টারনেট লাইন থেকে চাঁদাবাজি, কলেজের মুদি দোকানে চাঁদাবাজি, অবৈধভাবে শতাধিক রুম দখল করে রাখা, বিভিন্নভাবে মেয়েদের কু প্রস্তাব দেয়াসহ তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাওয়া হয়।

ইডেন কাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠেছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান নেতারা করেছেন মিশ্র মন্তব্য। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সানি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, এখন মানসম্মান নিয়ে ছাত্র রাজনীতি থেকে বিদায় নেয়াটাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ!

নিজেরাই নিজেদের শত্রু! প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মেসকাত হোসেন প্রশ্ন করে বলেন, আজকে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের এতো বড় ঘটনার জন্য দায়ী কারা? সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য বলেন, সংকট নিরসনে দুই পক্ষকে নিয়ে সংলাপ জরুরি ছিল।

সংগঠিত বিশৃঙ্খলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা সিকদার বলেন, সংকট নিরসনে ক্যাম্পাসে গিয়ে দুদিন বসে কথা বলার চেষ্টা করেছি, তারা কোনো কথা শুনতে নারাজ। শুধু তাই না আমরা ইডেন থেকে বের হবার আগেই নিউজ রেডি কি বলেছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন