ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুণ্যলগ্ন মহালয়া আজ

পুণ্যলগ্ন মহালয়া আজ,,

আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষ তিথিকে বলা হয় ‘দেবীপক্ষ’। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, এদিন কৈলাসের শ্বশুরালয় ছেড়ে সন্তানদের নিয়ে পৃথিবীতে আসেন দেবী দুর্গা। তখন থেকেই মণ্ডপে দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা শুরু হয়। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন মহালয়া আজ। ভোর থেকে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ।

দুর্গাপূজার শুরুতে দেবী দুর্গার আবাহন হিসেবে সারা বাংলাদেশে পালিত হয় মহালয়া। মহালয়ার পরের দিন থেকে শুরু হয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সময়কাল ১০দিন। আগামী ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে পূজার ষষ্ঠী দিন শুরু হবে। এটি ৫-দিন ধরে চলবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত যখন পূজা দশমীর দিন, দশমী পূজায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

এ উপলক্ষে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি রবিবার ঢাকার ঐতিহাসিক ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মহালয়া পূজা। এর পরে মন্দির চত্বরে আরতি, কীর্তন এবং অন্যান্য ধর্মীয় কর্মকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার ড. বিনয় জর্জ এবং প্রথম সচিব অনিমেষ চৌধুরী।

এ সময় তাদের স্বাগত জানান পূজা উদযাপন কমিটির মনিন্দ্র কুমার নাথ, রমেন মন্ডল এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান পরিষদের বাবু নির্মল কুমার চ্যাটার্জি প্রমুখ।

এ ছাড়া বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে যথাযথ মর্যাদায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালিত হয় মহালয়া।

শাস্ত্র মতে, মহালয়া পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের শুরুকে চিহ্নিত করে। এটি সেই দিনের প্রতীক যখন দেবী দুর্গা অসুর মহিষাশুরকে বধ করার পর পৃথিবীতে অবতরণ শুরু করেন।

দুর্গাপূজা হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব। এ বছর পূজা উদযাপনের জন্য সারাদেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় এ বছর ২৪১টি দুর্গা মণ্ডপ থাকবে।

গত বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় দুর্গাপূজার সময় হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘর ভাংচুরের সাম্প্রদায়িক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। মন্ডপে মন্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পুলিশ কর্মী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের স্বেচ্ছাসেবকরা একটি শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবপূর্ণ পূজা নিশ্চিত করতে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

এদিন অমাবস্যার শুরু এবং পরবর্তী পূর্ণিমায় কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দেবীপক্ষ। মহালয়ার পাঁচ দিন পর মহাষষ্ঠীতে শুরু হয় মূল দুর্গোৎসব।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, এ বছর দেবী দুর্গার আগমন গজ বা হাতিতে। এর ফলে বসুন্ধরা হবে শস্যপূর্ণ। আর দেবীর বিদায় হবে নৌকায়, যার অর্থ শস্য ও জলবৃদ্ধি। দেবীর এই আগমন ও গমনে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য এ বছরটা সত্যিকার অর্থেই কল্যাণকর।

পুরাণ অনুযায়ী, মহালয়ার দিনেই ব্রহ্মার কাছ থেকে মহিষাসুরকে বধ করার দায়িত্ব পান দেবী দুর্গা। ব্রহ্মার বরেই মহিষাসুর মানুষ ও দেবতাদের অজেয় হয়ে উঠেছিলেন। ফলে তাকে পরাজিত করার জন্য ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর যে মহামায়ারূপী নারী শক্তি তৈরি করেন, তিনিই দেবী দুর্গা। দশভুজা দুর্গা টানা ৯ দিন যুদ্ধ করে মহিষাসুরকে বধ করেন।

মহালয়ার ভোরে চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী দুর্গার আবাহন। আর এ চণ্ডীতেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা ও তার প্রশস্তি।

মহালয়া উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপে, ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালীমন্দির, স্বামীবাগের লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির, রামসীতা মন্দির, জয়কালী মন্দিরসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভোরে চণ্ডীপাঠ, চণ্ডীপূজা ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে ঘট স্থাপন করা হয়।

আনন্দবাজার/কআ

সংবাদটি শেয়ার করুন