স্বর্ণ গলাতে পোড়ানো হয় নাইট্রিক এসিড। আর গহনার সৌন্দর্য বাড়াতে ব্যবহার করা হয় সালফিউরিক এসিড। এ এসিড পোড়াতে চিমনি ব্যবহার করতে হয়। তবে এ নিয়ম মানছেন না ঘাটাইল পৌর এলাকার স্বর্ণালংকার ব্যবসায়ীরা। যা ২০০২ সালের এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে লোকালয়ে এসিড পোড়ানো বন্ধ করতে গত মঙ্গলবার পৌর মেয়র বরাবর আবেদন করেছেন ঘাটাইল বাজার রোডের বাসিন্দারা। আবেদনপত্রে সই করেছেন ২৮ ভুক্তভোগী।
ঘাটাইল উপজেলায় রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শতাধিক স্বর্ণের দোকান। দোকানগুলোতে স্বর্ণ পোড়ানোর কাজে অবাধে এসিড ব্যবহৃত হলেও দেখার কেউ নেই। অথচ এসিড নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তিন বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর জেলসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
স্বর্ণের দোকানে এসিড ব্যবহারের নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে, এসিড পোড়ানোর জন্য আলাদা কক্ষ ও চিমনি ব্যবহার করতে হবে। তবে, সরেজমিন পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন বাজারে তা দেখা যায়নি। উন্মুক্ত স্থানে নাইট্রিক এসিড পোড়ানোর কারণে হুমকির মধ্যে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। অবাধে নাইট্রিক এসিড ও সালফিউরিক এসিড ব্যবহার করায় বিষাক্ত ধোঁয়ায় সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘাটাইল বাজার রোডে আকন্দ টাওয়ারের পূর্বপাশে দুটি স্বর্ণ গলানোর কারখানা রয়েছে।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল কারখানা দুটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। স্বর্ণ গলানো হয় উন্মুক্ত পরিবেশে। এ কারণে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা সমস্যা হচ্ছে। কারখানাটির পাশেই খলিল প্লাজা। এর মালিক খলিলুর রহমানের ভাষা, বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে ঘরের দরজা-জানালা সবসময় বন্ধ রাখতে হয়। শ্বাসকষ্ট হয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় বৃদ্ধ ও শিশুদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইফুর রহমান খান বলেন, ‘নাইট্রিক এসিডে মাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড আছে, যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সালফিউরিক এসিডেও প্রায় একই রকম ক্ষতি হয়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ ছাড়াও হৃদযন্ত্রের সমস্যা হতে
পরিবেশ দূষণের কথা স্বীকার করেছেন পৌর স্বর্ণকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও কারখানার মালিক বিপুল চন্দ। তাঁর দাবি পৌর এলাকায় এসিড দিয়ে স্বর্ণ পোড়ানোর জন্য দুটি কারখানা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত কারখানাতেই স্বর্ণ পোড়ান। কারখানাগুলোতে লম্বা পাইপ দিয়ে ধোঁয়া বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি না হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নেই বলে জানান তিনি।
ঘাটাইল পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ মিয়া বলেন, অভিযোগ পেয়ে এরই মধ্যে ঘাটাইল বাজার ব্যবসায়ী সমিতিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।